করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণে আক্রান্ত ও মৃতের হার বেড়ে যাওয়াতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা গাজার হাসপাতালগুলোর ধারণক্ষমতার কাছাকাছি চলে এসেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ ভূখণ্ডের এমন করুণ অবস্থার কথাই বলেছে।
ফিলিস্তিনিদের শঙ্কা দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য উপকরণের অভাব, ভ্যাকসিন নিয়ে সন্দেহ, করোনা আক্রান্তদের কোনো তথ্য না থাকা ও পবিত্র রমজান উপলক্ষে গণ-জমায়েতের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে।
গাজার স্বাস্থ্যকর্মকর্তা বলেছেন, ৭০ শতাংশ আইসিইউ বেড দখল করেছে করোনা আক্রান্তরা। মার্চের প্রথম দিকেই এ সংখ্যা ৩৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এখানে গত ছয় দিনে ৮৬ জন করোনায় মারা গেছেন। করোনা রোগীর সংখ্যা এ সপ্তাহের আগেই ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা: আয়াদিল সাপারবেকভ বলেন, ‘হাসপাতালের ধারণক্ষমতার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালেই যে শুধুই রোগী আছে তা নয়, অন্য রোগীরাও আছে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে মারাত্মকভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
এ সপ্তাহে গাজায় সংক্রমণের হার ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও সাপারবেকভ বলেন, রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ, অনেক লোকের মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা গেলেও তাদের করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
সাপারবেকভ আরো বলেন, গাজা ভূখণ্ডে এখনো ওই সক্ষমতা আসেনি যে দ্রুত সংক্রমিত হয় এমন করোনা ভাইরাসের প্রজাতিগুলোকে পরীক্ষার সময় শনাক্ত করবে। অর্থাৎ, সংক্রমিতদের সম্পর্কে খুব সামান্যই তথ্য আছে কর্তৃপক্ষের কাছে।
এদিকে গাজার কবরস্থানেও চাপ বাড়ছে। গাজা শহরের গোরখোদক মোহাম্মদ আল-হারেস রয়টার্সকে বলেন, ‘তিনি কোনো কোনো দিন ১০ জন পর্যন্ত করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করেন। সংখ্যার হিসাবে এটা এক মাস আগে সংখ্যাটি ছিল এক থেকে দু’জন।
২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইল- ফিলিস্তিন যুদ্ধের সময়ের গোরখোদক মোহাম্মদ আল-হারেস এ সম্পর্কে বলেন, ‘যুদ্ধ ভয়ঙ্কর। ক্ন্তিু করোনাভাইরাস আমাদের কাছে আরো ভয়াবহ। যুদ্ধের সময় আমরা কবর খনন করি আর লাশ দাফন করি সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কোনো বিরতি নেই।’
জনবহুল গাজায় ২০ লাখ মানুষ বাস করে। বেশ কয়েক বছর ধরে গাজার সাথে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ সীমাবদ্ধ। কারণ, ইসরাইল মিসরের সহায়তায় গাজায় আবরোধ আরোপ করেছে। দু’দেশই এ অবরোধের কারণ হিসেবে নিরাপত্তা ইস্যু তুলে ধরেছে।
ফিলিস্তিনিরা বলেছেন, এ অবরোধ হলো সমগ্র জনগোষ্ঠীর ওপর শাস্তি। এ অবরোধের মাধ্যমে গাজার অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। অপ্রতুল সরবারহ ব্যবস্থা ও সরঞ্জামের অভাবে এ মহামারি প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গাজার সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতি বিরাজ করছে ইসরাইলে। এ দেশটিতে সবচেয়ে বেশি লোক টিকা নিয়েছে। প্রায় ৫৩ শতাংশ ইসরাইলি করোনার টিকা নিয়েছেন।
সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর