ন্যাটো মিত্র কানাডা আঙ্কারাকে উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে তুরস্কের ক্রমবর্ধমান অস্ত্র শিল্পে বিঘ্ন তৈরির চেষ্টা করেছে। তবে এতে খাতটির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা কম বলে দ্য মিডিয়া লাইনকে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। গত সোমবার অটোয়া বলেছে যে, কানাডার তৈরির সরঞ্জামগুলো তুরস্কের ঘনিষ্ঠ মিত্র আজারবাইজানকে প্রেরণ করা হয়েছিল, তা নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে আমেরিকা সমর্থিত আর্মেনিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে, এমন ‘নির্ভরযোগ্য প্রমাণ’ পেয়ে আঙ্কারাকে ক্যামেরাসহ ড্রোন প্রযুক্তি রফতানির অনুমতি বাতিল করেছ তারা।
ফিলাডেলফিয়া ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক অ্যারন স্টেইন বলেছেন, ‘স্বল্পমেয়াদে অন্যের কাছে ড্রোন বিক্রির ক্ষমতা তুরস্কের সীমিত হতে পারে, তবে এ কর্মসূচির জন্য নিষেধাজ্ঞা বিপর্যয়কর নয়।’ কানাডার এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে তুর্কি সরকার বলেছে, ‘আমরা আমাদের ন্যাটো মিত্রদের কাছে অনর্থক পদক্ষেপগুলো এড়ানোর প্রত্যাশা করি, যা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে এবং জোটের সংহতিকে ক্ষুণœ করবে।’
সিরিয়ায় ড্রোন ব্যবহারের অর্থ হ’ল, রাশিয়া যদি গুলি চালায় তাহলে তুরস্ক কোনো পাইলট হারাবে না, যা না হলে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদের সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ড্রোনগুলোর স্বল্প ব্যয় তুরস্কের উৎপাদন সহজতর করেছে। এটি এমন এক দেশটিকে সময়ে রাজস্ব সরবরাহ করছে, যখন দেশটির ইতোমধ্যে পর্যুদস্ত অর্থনীতি করোনা মহামারীতে আরো বেশি বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
গত ১০ বছরে আরো ঘরোয়াভাবে উৎপাদিত সরঞ্জামের ওপর তার সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করায় এই আনাতোলিয়ান জাতির অস্ত্র উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা সংস্থার খবরে বরাতে জানা গেছে যে, বিশ্বের শীর্ষ ১শ’ রাজস্ব ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টি প্রতিরক্ষা সংস্থাই তুরস্কের। কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তুরস্ক অস্ত্র শিল্প থেকে বার্ষিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১১ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব লাভ করেছে, যার ফলে দেশটিকে ১৪তম বৃহত্তম বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা রপ্তানিকারী হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।
আঙ্কারা মেডিপোল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মুজাফ্ফর সেনেল যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘ড্রোনের বর্ধিত ব্যবহার এরদোগানকে আরো দৃঢ় পররাষ্ট্র নীতির দিকে ঠেলে দিয়ে জাতীয়তাবাদী মনোভাব বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’
তিনি আরো বলেন যে, তুরস্কে ড্রোন শিল্প কেবল বাড়তেই থাকবে। কারণ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার লড়াই ক্রমবর্ধমান হারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। ড্রোনগুলোর বর্ধিত ব্যবহার যুদ্ধকে একইভাবে বদলে দিতে পারে, যেভাবে বিমানের ব্যবহার যুদ্ধের ধারাকে বদলে দিয়েছিল। সেনেল বলেন, ‘তুরস্ক একটি ড্রোন শক্তি হতে চলেছে।’
সূত্র : দ্য জেরুজালেম পোস্ট।