ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের প্রতিটি থানায় নিরাপত্তার জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় বসানো হয়েছে লাইট মেশিনগান (এলএমজি) ও চাইনিজ রাইফেল সম্বলিত চৌকি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) থানাগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এলএমজি চৌকি বসানো হয়েছে এসব থানাগুলোতেও। বালুর বস্তা দিয়ে তৈরি চৌকিতে সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে একজন পুলিশ সদস্য। থানাগুলোতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে মতিঝিলের পাশাপাশি ওয়ারী বিভাগের থানাগুলোতেও একই ধরনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল সোমবার মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মতিঝিল বিভাগের মতিঝিল থানা, সবুজবাগ থানা, খিলগাঁও থানা, পল্টন মডেল থানা, রামপুরা থানা, মুগদা থানা ও শাজাহানপুর থানায় বালুর বস্তা দিয়ে চৌকি তৈরি করে সেখানে এলএমজি ও চাইনিজ রাইফেল দিয়ে পুলিশ সদস্যের ডিউটিতে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি ও থানার বাড়তি নিরাপত্তায় গত কয়েকদিন আগেই থানাগুলোতে ভারি অস্ত্র বসানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের দিয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন পয়েন্টে।
রাজশাহীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আরএমপি মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস। তিনি জানান, গত শনিবার আরএমপির ১২ থানাতে এলএমজি চৌকি বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। গত রোববার চৌকির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
আরএমপি মুখপাত্র বলেন, গত বুধবার থেকে আরএমপির পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সদস্যদের হালকা ভারি অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। রোববার থেকে থানায় এলএমজি চৌকি বসানো হয়। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন প্রথমে তারা চৌকিতে দায়িত্ব পালন করবেন। পর্যায়ক্রমে সব পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হবে। এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক। আগেও দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তখনও এমন এলএমজি চৌকি স্থাপন করা হয়েছিল।’
সোমবার দুপুরে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় দেখা যায়, নিরাপত্তা চৌকিতে এলএমজি নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুম মুনীর বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা চৌকিতে একজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্যই মূলত এ প্রস্তুতি।’
রাজধানীর ওয়ারী থানা, ডেমরা থানা, শ্যামপুর থানা, যাত্রাবাড়ী থানা, গেন্ডারিয়া থানা ও কদমতলি থানায় এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে বলে জানান ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ। তিনি বলেন, চৌকিগুলোতে এলএমজি ও চাইনিজ রাইফেলসহ পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার সব থানার নিরাপত্তা বৃদ্ধির নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। থানার আশপাশে ২৪ ঘণ্টা টহলের নির্দেশনা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালায় হরতাল সমর্থনকারীরা। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় কয়েকটি অস্ত্র। ওই হামলাকারীদের মধ্যে ছিল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু-কিশোর। হামলাকারীরা থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে রাখা সাঁজোয়া গাড়িতে (এপিসি) আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে হামলাকারীরা থানার সরকারি দুটি পিক-আপ ভ্যান ও ২০ টনের একটি রেকার পুড়িয়ে দেয়। থানার সামনে বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে রাখা দুটি লেগুনা, দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও ১০-১২টি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয়া হয়। পরে থানা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে হামলাকারীরা।