রোহিঙ্গা স্থানান্তরের ৬ষ্ঠ ধাপের প্রথম দিনে ভাসানচরে পৌঁছেছে আরো ২ হাজার ১২৮ জন রোহিঙ্গা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ৬টি জাহাজে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা হয়ে তারা ভাসানচরে পৌঁছায়।
৬ষ্ঠ ধাপের প্রথম দিনে পৌঁছানো রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫১২ জন পুরুষ, ৬১৩ জন নারী ও ১০০৩ জন শিশু রয়েছে। এ সময় ঘাটে উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ভাসানচরে আসার পর পরই তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা। পরে ৬ষ্ঠ ধাপের প্রথম দিনে আসা রোহিঙ্গাদের দলটিকে নিয়ে যাওয়া হয় ওয়্যারহাউজে। সেখানে নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে ভাসানচরে বসবাসের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ধারণা দেয়। ওয়্যার হাউজে তাদেরকে দুপুরের খাবার খাওয়ানো হয়।
এর আগে, সকাল ৯টার দিকে নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়ন-৩ এ স্থানান্তরের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় (এনএসআই এর তত্ত্বাবধানে) মোট ২১২৮ জন রোহিঙ্গা নৌবাহিনীর ৬টি লজিস্টিক জাহাজযোগে চট্টগ্রাম বোটক্লাব জেটি হতে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দুপুর ৩টায় এসে ভাসানচরে পৌঁছান।
ভাসানচর থানার ওসি মো. মাহে আলম জানান, রোহিঙ্গাদের জাহাজ থেকে নামিয়ে প্রাথমিক মেডিক্যাল পরীক্ষা শেষে গাড়িযোগে ওয়্যার হাউজে সমবেত করে ব্রিফ দেওয়া হয়। পরে ভাসানচরের ক্লাস্টারে স্থানান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ভাসানচরে পৌঁছায় এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুতকৃত ৭, ৮ ,৯ ও ১০ নম্বর ক্লাস্টারে তাদেরকে রাখা হয়। প্রথমধাপে ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে ৮১০জন, পুরুষ ৩৬৮জন, নারী ৪৬৪জন।
গত ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজার থেকে আরো এক হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা সদস্য ভাসানচরে পৌঁছান। তাদের মধ্যে ১৩০ জনের বেশি রয়েছে প্রথম দফায় যাওয়া রোহিঙ্গাদের স্বজন। এর আগে, গত বছরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভাসতে থাকা দুই ধাপে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।
গত ২৯ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের প্রথম পর্যায়ে ভাসানচরে এসে পৌঁছায় এক হাজার ৭৭৬ জন রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে পুরুষ ৪০৪ জন, নারী ৫১০ জন ও ৮৬২ জন শিশু রয়েছে। ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও এক হাজার ৪৬৭ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৪৭ জন, নারী ৪০৫ ও ৭১৫ জন শিশু ছিল।
এর আগে, ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল হাতিয়ায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হয়।
২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও আগেই শেষ হয় সব অবকাঠামো নির্মাণ। হাতিয়া থেকে প্রায় ৫০কিলোমিটার দূরে ১৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার দ্বীপের এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। এতে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন জানান, ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরে মোট এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের।