আনারস জ্বরের ঔষধ’– এরকম কথা হয়ত সকলেই শুনেছেন ৷তবে আনারস শুধু জ্বর নয়, নানা অসুখ-বিসুখকে দূরে রাখতে ও সংক্রমণ দমন করতে সাহায্য করে। আর গরমের সময় আনারস এক যাদুকরী ফল। শরবত হোক আর কাটা টুকরো হোক এই গরমে তাই আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত হতে পারে আনারস।
আনারসের সঙ্গে একটি পুদিনা পাতা যোগ করলে শরবতের স্বাদে যোগ হবে অরো একটা নতুন মাত্রা। আনারসে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ফাইবার আছে, যা গরমে ত্বক ও দেহের জন্য খুব উপকারী। গুণে ভরা এই ফল খেয়ে যেমন শরীরে পানির চাহিদা মেটানো যায় তেমনি বাড়তি পুষ্টিগুণ পেতে জুড়ি নেই এর। জেনে নিই আনারসের কয়েকটি উপকারিতা-
পুষ্টির অভাব দূর করে
লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই বহুকাল ধরে রোগীর পথ্য হিসেবে আনারস খাওয়ানো হয়। এর কারণ হলো, আনারস দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আনারস কৃমিনাশক
আনারস কৃমিনাশক। কৃমি দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিৎ। তবে অবশ্যই অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে খালি পেটে আনারস না খাওয়াই ভালো।
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস চোখের অনেক রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে সুস্থ থাকে আমাদের চোখ। এতে চোখের নানা রোগ হওয়ার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে
শুনতে অবাক লাগলেও গবেষণায় প্রমাণিত যে, আনারস আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আনারসে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। এতে ফ্যাট রয়েছে অনেক কম। সকালে আনারস বা সালাদ হিসেবে এর ব্যবহার অথবা আনারসের জুস অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
হাড় গঠন করে
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে শক্ত ও মজবুত। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
হজমশক্তি বাড়ায়
আনারস আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন, যা আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন আনারস খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায়
আনারসের ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে ক্যালসিয়াম। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ঠিকঠাক থাকে।
ত্বকের যত্নে
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। ত্বকের অসুখ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, মাড়ির যে কোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আনারস। দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এছাড়াও আনারসের প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়।
সংক্রমণ দমন করে
আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন এনজাইম, যা সংক্রমণ দমন করে ৷নিয়মিত আনারস খেলে খেলাধুলা করতে গিয়ে পাওয়া আঘাত বা ক্ষত সহজেই সেরে যায় ৷
ক্যানসার প্রতিরোধ করে
আনারস ক্যানসার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে ৷ আনারস শরীরের ইমিউন কোষগুলোকেও সক্রিয় করে তোলে ৷ এই তথ্যটি প্রকাশ করেছে ক্যান্সার লেটার ম্যাগাজিন ৷
প্রতি ১০০ গ্রামে আনারসে রয়েছে ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি। ১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ রয়েছে।
তবে আনারস থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয় ৷ বিশেষ করে ঠোঁট ফুলে যায় কিংবা গলায় বা জিভে এক ধরনের অস্বস্তি বোধ হয় ৷ এ রকম হলে আনারস না খাওয়াই ভালো৷ তবে আনারস কাটার পর ভালো করে ধুয়ে নিলে এলার্জির আশঙ্কা কমে