১,৪৯৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় ৬টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়াও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ২টি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৪ মার্চ) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড.শাহিদা আক্তার।
সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১০ম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৬টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৩টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল।
তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১,৪৯৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৩ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৯৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯১৬ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য (এডিবি, এএফডি ও ইআইবি ঋণ) ৫৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫ হাজার ৮৫৭ টাকা।
অনুমোদিত প্রস্তাবনাগুলো বিস্তারিত তথ্য একটু পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আপনাদের জানাবেন।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘ভোলা (পরান তালুকদারহাট)-চরফ্যাশন (চরমানিকা) আঞ্চলিক সহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর- পিডব্লিউ-৩ এর পূর্ত কাজ যৌথভাবে (১) মো. ময়েনুদ্দিন (বাঁশি) লিমিটেড এবং (২) নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেড-এর কাছ থেকে ১২২ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার ৫৯০ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক “ভোলা (পরানতালুকদারহাট)-চরফ্যাশন (চরমানিকা) আঞ্চলিক সহাসড়ক উন্নয়ন” প্রকল্পের প্যাকেজ নং- পিডব্লিউ-০৬ এর পূর্ত কাজ যৌথভাবে (১) মো. বদরুল ইকবাল লিমিটেড (২) হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড এবং (৩) ওয়েস্টার কন্সট্রাকশন অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড এর কাছ থেকে ১১৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪১ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস) পিপিপি প্রকল্প’ নির্মাণ, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ তদারকির জন্য স্বতন্ত্র প্রকৌশলী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) মেসার্স ইন্টারন্যাশনাল কনসালট্যান্ট অ্যান্ড টেকনোক্রাটস প্রাইভেট লিমিটেড,ভারত (২) মেসার্স সেলাদিয়া অ্যাসোসিয়েটস ইনকরোপেরেটেড যুক্তরাষ্ট্র-কে ৭৯ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা কর্তৃক এক্সেলারেট এনার্জি এলপি, ইউএস-এর কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ৬.৫৩০০ মার্কিন ডলার হিসেবে এতে মোট ব্যয় হবে ২১৮ কোটি ৭ লাখ ২৯ হাজার ২৩ টাকা।
তিনি বলেন, সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ঢাকা ওয়াসার ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনাবল ওয়াটার সাপ্লাই (ডিইএসডব্লিউএস) প্রকল্পের প্যাকেজ-২ এর আওতায় গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার থেকে বারিধারা পর্যন্ত ১৪ কি.মি. পরিশোধিত পানির ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন কাজে চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৭৭৭ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার ২৭ টাকা।
ড. শাহিদা বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ৫০ হাজার মে.টন (+৫%) নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স পি.কে এগ্রি লিংক প্রাইভেট লিমিটেড এই চাল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১৭৭ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হয়। সভায় দুটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার জানান।
তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইন্টেনেন্স ড্রেজিং’ কার্যক্রম পিপিপি পদ্ধতির পরিবর্তে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএডিসি কর্তৃক ভারতের ন্যাশনাল সীড করপোরেশন (এনএসসি) থেকে জেআরও-৫২৪ জাতের ৮০০ মেট্রিক টন মানঘোষিত পাটবীজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।