ইয়েমেনে ছয় বছর ধরে চলা যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে নতুন একটি শান্তি পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সৌদি সামরিক জোট সমর্থিত ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে ইরান সমর্থিত দেশটির হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যে ‘অতি দ্রুত’ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রস্তাব এসেছে রিয়াদের পক্ষ থেকে।
সৌদি আরবের নতুন এই শান্তি পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ আকাশ ও সমুদ্র সংযোগ পুনরায় চালু করাসহ রাজনৈতিকভাবে আলোচনা শুরুর বিষয়টিও রয়েছে। হুথি বিদ্রোহীরা অবশ্য বলছে, সৌদি আরবের এমন প্রস্তাব নতুন কিছু নয়। আর আকাশ ও সমুদ্রপথে জারি থাকা অবরোধ তুলতে এই প্রস্তাব কাঙ্ক্ষিত স্থানে যেতে পারবে না বলেও মনে হচ্ছে তাদের।
সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান। উল্লেখ্য, ইয়েমেনের বেশিরভাগ এলাকা এখন হুথিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান এই চুক্তি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হুথিদের। হুথিরা সম্মতি দিলেই এই পরিকল্পনা কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।
ইয়েমেনে সৌদি সমর্থিত সরকার রিয়াদের এমন প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও হুথিরা বলছে, সৌদির এই উদ্যোগে নতুন কিছু নেই। আর তারা রাজধানী সানা ও পশ্চিমের বন্দর হোদেইদাহতে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য তাদের যে চাহিদা তা রিয়াদের নতুন এই পরিকল্পনায় যথাযথভাবে পূরণ করা হয়নি। সৌদি আগ্রাসন বন্ধের দাবিও জানিয়েছে তারা।
হুথিদের প্রধান আলোচক আব্দুল সালাম রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা আশা করবো সৌদি আরব আমাদের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেবে।’ একটি শান্তি চুক্তির জন্য হুথিদের পক্ষ থেকে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও এতে মধ্যস্থতাকারী ওমানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সোমবারের ওই সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়টি এখন হুথিদের ওপর নির্ভর করছে। তাদের অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে, নাকি ইরানের স্বার্থকে।
তবে সৌদির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা, গত বছরও এমন এক পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। ছয় বছর ধরে হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সৌদি আরব যে সামরিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তাতে তাদের সঙ্গ দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান।
হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ২০১৪ সালে দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। মূলত ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশান্তরি প্রেসিডেন্ট আব্দুরাব্বুহ মানসুর হাদিকে ফের ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য রিয়াদের পক্ষ থেকে এই সামরিক অভিযান শুরু করা হয়।
তবে বিদ্রোহীদের পরাস্ত করতে ব্যর্থ হয় তারা। তবে দুই পক্ষের মধ্যে সামরিক সংঘাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারান। ইয়েমেনে দেখা দেয় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট। দেশটির এক তৃতীয়াংশ জনগণ অর্থাৎ আনুমানিক দুই কোটি মানুষ এখন মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। অপুষ্টিতে ভুগছে বিশ লাখ শিশু।