ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ছয় বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় জাতির সঙ্গে তেহরানের করা পরমাণু চুক্তি নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুললেই পরে ইরান পরমাণু চুক্তিতে ফিরবে।
তিনি বলেছেন, পদক্ষেপটা আগে যুক্তরাষ্ট্রকে নিতে হবে। ট্রাম্পের শাসনামলে ইরানের ওপর ওয়াশিংটন যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তা প্রত্যাহার করতে হবে আগে। তাহলেই পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে পারে ইরান।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন দেওয়া ভাষণে খামেনি বলেছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটা বড় অপরাধ করেছিলেন।
তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্প ভুল পথ নিয়েছিলেন। এতে তার দেশেরই বদনাম হয়েছে। ওদের ওপরই এখন সবচেয়ে বেশি চাপ তৈরি হয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন একই পথে চলে, তাহলে তাদের সেই নীতিও ব্যর্থ হবে।’
ট্রাম্প কী করেছিলেন
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইরানসহ একাধিক দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকেও বেরিয়ে আসে। ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির পর তেহরানও সিদ্ধান্ত নেয়, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি মানা হবে না। তারাও সম্প্রতি প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম মজুত করেছে বলে অভিযোগ।
ওই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন সই করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ইরান তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে। কিন্তু তারা এখন সাড়ে চার শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার পর ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুতের ঘোষণা দেয় ইরান।
বাইডেন কী করবেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর জো বাইডেন বলেছেন, তিনি আবার এই চুক্তিতে ফিরতে চান। তবে প্রশ্ন হলো চুক্তিতে ফেরার ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ কে নেবে?
জাতিসংঘের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংস্থা আইএইএ-র মহাপরিচালক দুই দেশের সঙ্গেই কথা বলছেন। তিনি চলতি মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র আবার এই চুক্তিতে ফিরতে পারে। তিনি বলেছিলেন, ‘এর সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িয়ে আছে। তবে এটুকুই বলতে পারি, এই চুক্তি বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।’
ইরান তাড়াহুড়ো করবে না
খামেনি বলেছেন, ‘ইরান সরকার কোনো তাড়াহুড়ো করবে না। নিষেধাজ্ঞার ফলে স্থানীয়স্তরে জিনিসগুলো তৈরি হচ্ছে। আমরা যে ঘোষণা করেছি, তা যদি যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেয়, তাহলে সব সমস্যা মিটে যাবে।’
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো খুবই সন্দিগ্ধ। তারা মনে করে, ইরান আসলে পরমাণু বোমা তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু ইরানের দাবি, তাদের এসব পরমাণু প্রকল্প শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে