সুইজারল্যান্ডে মুখ ঢেকে রাখা যেমন নিকাব পরা নিষিদ্ধে আইন করতে আগামী ৭ মার্চ একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর ফলে প্রকাশ্যে দেশটিতে নিকাব পরা নিষিদ্ধ হতে পারে। যদিও এ ধরনের প্রস্তাবে দেশটির মুসলিমরা ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয়ভাবে আইনটিতে মুসলিম নারীদের বোরকা পরিধানে নিষেধাজ্ঞার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে মূলত তাদেরকে টার্গেট করে এটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন মুসলিমরা।
প্রস্তাবিত আইনটিতে বলা হয়, কেউ প্রকাশ্যে তাদের মুখ ঢেকে রাখতে পারবে না এবং কাউকে তাদের লিঙ্গের ভিত্তিতে মুখ ঢেকে রাখতে বাধ্য করার অনুমতি নেই। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও থাকছে।
যেমন- স্বাস্থ্যগত কারণ ও কার্নিভালের মতো প্রথার ক্ষেত্রে এই আইন শিথিল হতে পারে বলে প্রস্তাবিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের ৩২ বছর বয়সী নারী ভ্যালেন্টিনা, যিনি নিকাবকে ব্যক্তিগত পছন্দ হিসেবে উল্লেখ করছেন। তিনি বলেন, আমি এটা নিজের জন্যই পরিধান করে থাকি, বাইরের বিশ্বের কাছে কোনো প্রতীক হিসেবে নয়।
এক বছরেরও কম সময় আগে ভ্যালেন্টিনা তার স্কার্ফকে নিকাবে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, আমি এটি পরিধান করে আরও ভাল ও নিরাপদ বোধ করি। এটি প্রার্থনারও একটি অংশ। তবে তিনি হয়তো বেশিদিন নিকাব পরতে পারবেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন জরিপ বলছে, ভোটাররা এই আইনটিকে সংকীর্ণভাবে অনুমোদন করবেন। মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এই পদক্ষেপ তাদেরকে সমাজ থেকে একাকী করে ফেলতে পারে।
ডানপন্থি সুইস পিপলস পার্টির (এসভিপি) রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত এগারকিনগার কমিটি মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারা বলছিলেন, এটি সুইজারল্যান্ডে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামের ক্ষমতায়নের দাবির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
কমিটি যুক্তি দেখিয়েছে, মুক্ত মানুষেরা তাদের মুখ দেখায় এবং বোরকা ও নিকাব সাধারণ পোশাক নয়, এটি নারীদের ওপর অত্যাচারের প্রতীক।
২০১৭ সালে এই কমিটি বিষয়টিকে একটি গণভোটে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় এক লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলেন, যার কারণে আগামী ৭ মার্চ দেশটিতে এ বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
লুজার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম নিয়ে গবেষণা করেন এবং সুইজারল্যান্ডের ‘দ্য বুরকা ডিবেট’ বইয়ের লেখক আন্দ্রেয়াস টুঙ্গার-জানেটি আসন্ন গণভোটকে ‘পোশাকের চেয়ে বেশি কিছু’ বলে অভিমত দিয়েছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, সুইজারল্যান্ডে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মুসলমান বসবাস করে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ, যাদের বেশিরভাগই বলকান অঞ্চলে বসবাস করে। মুখ ঢেকে রাখা নারীদের বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও টুঙ্গার-জ্যানেটি জানিয়েছেন, এই সংখ্যা খুবই কম।
গত বছর তিনি সুইজারল্যান্ডের মুসলিম সম্প্রদায়ের মুখ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। যেখানে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কী পরিমাণ নারী পুরো মুখ ঢাকা রেখে নিকাব পরতে জানেন।
টুঙ্গার জানিয়েছেন, সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, সুইজারল্যান্ডে কোনো নারী বোরকা পরেন না। ২১ থেকে ৩৭ বছর বয়সী কিছু নারী নিকাব পরে থাকেন।