spot_img

যুক্তরাষ্ট্র- চীন শীতযুদ্ধের সংঘাত কেন্দ্র ভারত

অবশ্যই পরুন

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় চীনের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী এক সহযোগিতার বন্ধন হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় পাচ্ছে শক্তিশালী আরেক মিত্রতা তৈরির সুযোগ। ভারত নামের এই রাষ্ট্রটি স্নায়ু-যুদ্ধকালীন নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য ঝেড়ে ফেলে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার বন্ধনে যোগ দেওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে।

এমনই হবে শতভাগ তেমন গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ককে আগামীর দিনগুলোতে অনেক কূটনৈতিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। মিত্র রাষ্ট্রের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রত্যাশা; ভারতের ক্ষেত্রে হয়তো তাতে ছাড় দিতে হবে, ওয়াশিংটনের এই ছাড় দেওয়ার ভিত্তিতেই নির্মিত হবে নতুন মিত্রতার বুনিয়াদ।

মার্কিন নীতি-নির্ধারকরা কেন নয়াদিল্লির সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার ঐক্য চান- তা নিয়ে কোনো লুকোচুরি নেই। যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বীতার এই দ্বৈরথে মার্কিন স্বার্থরক্ষায় প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে ভারত।

আদর্শগত সংঘাতের তীব্রতা সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাব বিস্তার ঠেকানোর খুঁটি। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গঠিত চীন বিরোধী কোয়াড জোটে সর্ব-পশ্চিমের সদস্য।

চারটি দেশই গণতান্ত্রিক। কিন্তু, বিশাল বাজার এবং উদ্ভাবনী সক্ষমতার জনগোষ্ঠী ভারতকে এই জোটের সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় সদস্যে পরিণত করেছে। ভারতের সহযোগিতায় গণতান্ত্রিক তথ্যপ্রযুক্তি জোট তৈরি করে ইন্টারনেট এবং সহযোগী শিল্পে চীনা দখল ঠেকাতে পারবে ওয়াশিংটন।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিকট অতীতে বেইজিং এর সঙ্গে সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও, এখন নয়াদিল্লির কাছে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতার যুক্তিটি খুবই আকর্ষণীয়। তার আরেকটি কারণ; চীনের পক্ষ থেকে ক্রমবর্ধমান হুমকি। ভূরাজনৈতিক প্রভাবকগুলো এবং চীনের ক্রমশ বেড়ে চলা প্রতিপত্তির কারণেই- এশীয় দুই আঞ্চলিক শক্তি পরস্পর বিরোধী হয়ে উঠছে।

সীমান্তে নিয়মিত উত্তেজনা, বিশেষ করে গেল বছরের জুনে ২০ সেনা নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় জাতীয়তাবাদে আঘাত লাগে। জনগণ আর সরকারের বেইজিং বিদ্বেষী মনোভাব পেয়েছে নতুন মাত্রা। হিমালয়ের পশ্চিম সীমানায় বেইজিং সীমান্তরেখাও পরিবর্তন করতে চাইছে। আবার প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মিয়ানমারে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের আওতায় চলমান বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ নিয়েও শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন ও ভীত দিল্লি। তাদের দৃষ্টিতে ভারতকে ঘিরে ফেলতেই স্থল ও নৌপথে এসব প্রকল্প নির্মাণ করছে বেইজিং। এছাড়া, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থানে চীনের একনিষ্ঠ সমর্থন এই সন্দেহের আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে।

২০১৬ সালেই মোদি বলেছিলেন, “আমাদের স্বৈরাচারী প্রতিবেশী আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সুদূরের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর কাছে ভারতের সমর্থন আরও অমুল্য হয়ে উঠবে। সে বাস্তবতায় আমি যুক্তরাষ্ট্রকে অপরিহার্য মিত্র হিসেবে দেখছি।”

মার্কিন নীতি নির্ধারকদের কাছে এ মনোভাব যেন স্বস্তির সুবাতাস। ১৯৯০ এর দশক থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারিত্ব তৈরির পথে হেঁটেছে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দল নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন। গতি সন্তোষজনক না হলেও, মিত্রতার বন্ধন তৈরির চেষ্টা ইতিবাচক ভাবেই এগিয়ে চলেছিল অতীতে। যেমন; বুশ ভারতের সঙ্গে বেসামরিক পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহের চুক্তি করেন। আবার বারাক ওবামা দেশটির কাছে বিপুল অংকের অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দেন। সদ্য সাবেক ট্রাম্পের আমলে, জন-সমাবেশে একে-অপরের ভূয়সী প্রশংসায় মাতেন মোদি ও ট্রাম্প।

গেল জুনের সীমান্ত সংঘাত সেই অগ্রগতিতে নতুন ছন্দ যোগ করেছে মাত্র। এসময় দিল্লি কয়েক ডজনের বেশি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে এবং কোয়াডের আওতায় দৃশ্যমান সামরিক মহড়ার পরিধি বাড়ানোর ব্যাপারে তাগিদ দেন নরেন্দ্র মোদি। ওয়াশিংটনের কাছে যা ছিল না চাইতেই বৃষ্টির মতো সুখবর। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্টিভ বাইগেন ইঙ্গিত দেন যে, ন্যাটোর আদলে কোয়াডকেও একটি শক্তিশালী সামরিক জোটে রূপ দেওয়া হবে।

তবে বিষয়টি এতো সহজ নয়। দিল্লিকে বেইজিংয়ের সঙ্গে সন্তোষজনক একটি সম্পর্ক বজায় রাখতেই হবে। শুধুমাত্র বিশাল সীমান্তে চীনের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের জন্যে নয়। জোট নিরপেক্ষ নীতি থেকে ভারত অতীতে বেশ ভালো লাভবান হয়েছে; চীনা বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির সহায়তায়।

মোদির সরকার একটি ভারসাম্যহীন ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক নীতি তৈরি করতে চায়, যার আওতায় চীনের চাইতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ হবে ভারত। তবে একইসঙ্গে, সীমান্ত সংঘাত এড়ানোও প্রধান লক্ষ্য, যাতে খুব বেশি যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরতা তৈরি না হয়। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহের স্রোতে গা ভাসালেও, চোখ বন্ধ করে চীনের মতো শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে চায় না দিল্লি। বিশেষ করে, সংঘাতের নানা দিক আলোচনার মাধ্যমেই সুরাহা করতে চায় ভারতীয় প্রশাসন।

সর্বশেষ সংবাদ

মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এমবাপ্পে!

ছোট থেকে স্বপ্ন দেখতেন, একদিন রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে খেলবেন। স্বপ্ন এখন বাস্তব। কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়ালের হয়ে গত অগাস্ট থেকেই...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ