আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পেশিনিয়ানকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার আর্মেনীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতির বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবর জানায়।
আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিক গাসপারিয়ান এই বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পেশিনিয়ানকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সেনাবাহিনীর এই আহ্বানকে প্রধানমন্ত্রী নিকোল পেশিনিয়ান সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা বলে নিন্দা করেন। পাশাপাশি তিনিবুক বার্তায় পেশিনিয়ান সেনাপ্রধানকে পদচ্যুত করার ঘোষণা দেন।
গত বছরের নভেম্বরে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তির পর থেকেই দেশজুড়ে বিরোধিতা ও বিক্ষোভের মুখোমুখি নিকোলে পেশিনিয়ান। যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিপর্যয়ের জন্য বিক্ষোভকারীরা তাকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়ার দাবি করে আসছেন।
নিকোল পেশিনিয়ানের পদত্যাগের দাবিতে বিরোধীদের নতুন করে আন্দোলনের ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হলো।
বৃহস্পতিবার রাজধানী ইয়েরেভানে বিরোধীরা জড়ো হয়ে পেশিনিয়ানের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এই সময় তারা ‘ নিকোল, তুমি বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘নিকোল, গদি ছাড়ো’ বলে স্লোগান দেন।
তবে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনী শক্তি ব্যবহার করবে কিনা, তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সেনাবাহিনী ও নিকোল পেশিনিয়ানের সরকারের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
এদিকে আর্মেনিয়ায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনায় রাশিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয়পক্ষকে সংবিধানের কাঠামোর ভেতরে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
১৯৯১ সালের পর থেকেই সাবেক দুই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে উত্তেজনাকর সম্পর্ক চলে আসছে। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের ভূমি হিসেবে স্বীকৃত নাগরনো-কারাবাখ ও এর সাথে সংযুক্ত সাতটি অঞ্চল আর্মেনিয়া দখল করলে উত্তেজনা আরো বাড়ে।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনী বেসামরিক জনগণ ও আজারবাইজানি বাহিনীর ওপর হামলা করলে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণমাত্রায় নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়।
প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে চলা এই যুদ্ধে আর্মেনিয়ার কাছ থেকে বেশ কয়েকটি কৌশলগত শহর ও অন্তত তিন শ’ জনবসতি ও গ্রাম দখলমুক্ত করে আজারবাইজান।
যুদ্ধ বন্ধ করতে ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের উদ্দেশে দেশ দু’টি রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১০ নভেম্বর একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিটিকে আজারবাইজানের জয় ও আর্মেনিয়ার পরাজয় হিসেবে মনে করা হয়। চুক্তিটির ফলে আর্মেনিয়াকে নাগরনো-কারাবাখ থেকে তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সরিয়ে ফেলতে হচ্ছে।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি ও আলজাজিরা