ইউরোপীয়দের কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরার উদ্দেশে নেদারল্যান্ডের হেগে সৃষ্টিশীল উপায়ে অমর একুশে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের ভার্চুয়াল আয়োজনে স্বনামধন্য দুটি প্রতিষ্ঠান নেদারল্যান্ড জাতীয় ইউনেস্কো কমিশন এবং ইউরোপা নস্ট্রা (ইউরোপের সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রসার সংক্রান্ত সর্ব ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান) অংশগ্রহণ করে।
মাতৃভাষার বৈচিত্র্যতা নিয়ে দূতাবাস ‘ভাষার বৈভব’ শীর্ষক একটি ভিডিও উপস্থাপন করে। নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হামিদুল্লাহ স্বাগত বক্তব্যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে লালন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
দি হেগের মেয়র জান ভ্যান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের সাথে এই আন্দোলন ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে।
ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, `শান্তি ও ন্যায়ের শহর দি হেগে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় ২০০টি সংস্থার পাশাপাশি শহরের অর্ধেকের বেশি অধিবাসী রয়েছেন যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন।’
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শান্তি ও সম্প্রীতির সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত ১১ জন খ্যাতনামা কবি তাদের নিজ নিজ ভাষায় শান্তির বার্তা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্বলিত ১১টি কবিতা পাঠ করেন।
তারা হলেন নেদারল্যান্ডসের জার্মেই ড্রোগেনব্রডট, সুইডেনের ব্রেন্ট বার্গ, স্পেনের জোনা বার্গঘার্ডট, ফ্রান্সের হোসে মুচনিক, ইংল্যান্ডের গ্যারি লুস, ইতালির ক্লডিয়া পিচিনো, রাশিয়ার ভাদিম তেরেখিন, বুলগেরিয়ার মাজা পানাজোটোভা, জার্মানির টোবিয়াস বার্গঘার্ডট ও লেবাননের ডালিলা হিয়াওই এবং বাংলাদেশের আমিনুর রহমান।
তারা সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও মেলবন্ধনকে জোরদার করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াসে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এধরণের অনুষ্ঠানের প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূতের সঞ্চালনায় নেদারল্যান্ডসে ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের চেয়ারম্যান, ইউরোপা নস্ট্রার সেক্রেটারি জেনারেল এবং দি হেগের সাবেক ডেপুটি মেয়র তাদের বক্তব্যে মাতৃভাষাকে নিজ নিজ স্বকীয়তা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম বলে উল্লেখ করেন।
তারা বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সম্প্রীতি জোরদারকরণে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এর আগে সকালে নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের উপস্থিতিতে দি হেগের জাউদার পার্কে অবস্থিত স্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সূত্র : ইউএনবি