অং সান সুচির বিরুদ্ধে নতুন মামলা আরোপের প্রতিবাদে আবারও ফুঁসে উঠেছে মিয়ানমারের জনসাধারণ। বুধবার সকালে ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিলে জড়ো হয় হাজারো জনতা। সমগ্র ইয়াঙ্গুন জুড়েই বিক্ষোভকারীরা লাল পতাকা প্রদর্শনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন জানান।
রাস্তায় বসে অবরোধ করায় চলেনি কোন যানবাহনও। যানবাহন চালকরাও নিজেদের গাড়ি রাস্তায় রেখেই অবরোধে যোগ দিয়েছেন। এক ব্যানারে দেখা যায় ‘আমরা কখনোই সামরিক বাহিনীর পদতলে হার স্বীকার করবো না’ লেখা প্রতিবাদ।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ জানান, তার কাছে খবর আছে মূল শহর ইয়াঙ্গুনে নানা অঞ্চল থেকে সেনা পাঠানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী মিয়ানমারের জনগণের উপর আরও অত্যাচারের মাত্রা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
টম অ্যান্ড্রুজ আরও বলেন, এর আগেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের হত্যা, গুম ও আটক করার নজির রয়েছে। তবে বুধবার সকালে ইয়াঙ্গুনে কোন বড় রকম সামরিক জমায়েত লক্ষ্য করা যায়নি।
প্রায় হাজারখানেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও কর্মী সচিবালয়ের সামনে জড়ো হয় সু চির মুক্তির দাবিতে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশকালে এই সচিবালয় ছিল ব্রিটিশ বার্মার প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র।
দুই সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হবার পর থেকে সু চিকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। তার ওপর গতবছরের নির্বাচনের সময়ে কোভিডের বিধিনিষেধ অমান্য করার দায়ে নতুন মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানান সু চির আইনজীবি খিন মং জ। সু চির উপর ইতোমধ্যেই অবৈধভাবে ওয়াকিটকি পাচারের দায়ে মামলা হয়েছে।
খিন মং জ আরও জানান, তিন আগে থেকে এই নতুন মামলার ব্যাপারে জানতেন না, “আমরা মামলার বিষয়টি শোনার সাথে সাথেই ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেই, কিন্তু ততোক্ষণে তা শেষ হয়ে গেছে। কী হয়েছে সেখানে এবিষয়ে পরবর্তীতে বিচারক আমাদের জানিয়েছেন।”
খিন মংকে আগে থেকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। কারণ খিন মংকে এখনো সু চি’র আইনজীবি হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়নি এবং তাকে সু চি’র সাথে দেখা করতেও দেওয়া হচ্ছে না।
সু চি’র এই মামলা কতদিন চলবে তা এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, তবে মামলাটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে পারে বলে খিন মং এর ধারণা।
মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবারও দেশটিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই মিয়ানমারের শহর, গ্রামগঞ্জে সর্বত্র সাধারণ জনতার প্রতিবাদ চলছে। সেই আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে অং সান সু চি’র বিরুদ্ধে এই নতুন মামলা।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জ মিন তুন মঙ্গলবার এক প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন যে সু চি সহ অন্যান্য নেতারা নিরাপদ স্থানে রয়েছেন। ১ মার্চ তাদের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আগেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই কর্মকান্ডে ফলাফল হিসেবে তাদের মঞ্জুরি বাতিল করেছিল। সু চি’র বিরুদ্ধে নতুন মামলার পর তারা সু চিকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে আবারও।
চীন সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক সমালোচনা না করলেও মিয়ানমারে চীনা রাষ্ট্রদূত চেন হাই বলেন, ‘বর্তমানে মিয়ানমারে যে পরিস্থিতি চলছে, নিঃসন্দেহে এমনটা চীন আশা করেনি।’ তিনি আরও জানান, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি চলছে সে ব্যাপারে চীন আগে থেকে কিছুই জানতো না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিয়ানমারে আন্দোলনের গণজোয়ার থামাতে গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, জলকামান সবই ব্যবহার করেছে।
তবে মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভের এগারোতম দিনে আন্দোলনকারীর সংখ্যা ছিল আগের চাইতে কম। শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ মিয়ানিগোন ইন্টারসেকশনে এবং কিছু অংশ মার্কিন দূতাবাসের সামনেও প্রতিবাদ মিছিল করেছে।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক, মিয়ানমার বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শুল্ক বিভাগসহ সরকারি ভবনগুলোর বাইরে আন্দোলনকারীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র র্যালি দেখা গেছে । তারা জনসাধারণকে আইন অমান্য করে আন্দোলনে আসতে আহ্বান জানিয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান