ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় প্রধান দুই আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় এই রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। আলোচিত এই মামলার রায় প্রকাশের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ প্রতিক্রিয়া জানান।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় অভিজিতের স্ত্রী বলেন, ‘অল্প কিছু চুনোপুঁটির বিচার করে জঙ্গিবাদের উত্থান ও শেকড় উপেক্ষা করা ন্যায়বিচার হতে পারে না।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার অভিজিৎ হত্যা মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত উগ্রবাদী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) পাঁচ সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসাথে অপর এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার আগে কাশিমপুর কারাগারে থাকা চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলার দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির ও মো: আরাফাত রহমান। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি হলেন শফিউর রহমান ফারাবি।
তাদের মধ্যে মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির শুরু থেকেই পলাতক। বাকি চারজন কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করে। যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলার ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) গোলাম সারোয়ার খান জাকির। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
ওই দিন যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় ৪ ফেব্রুয়ারি ফের যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, লেখালেখি ও ভিন্নমতের জন্য অভিজিৎকে অনেক আগেই লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামে দুটি বইকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় আনসার আল ইসলাম।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: মজিবুর রহমান ১১ এপ্রিল ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) গ্রহণ করেন। বিচারক ১ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।