spot_img

বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ এবং ইসলাম

অবশ্যই পরুন

ইদানিং আমাদের কি এক অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছে, না আছে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা, না করা হয়ে ছোটদের স্নেহ! আমাদের মনে কি কখনোও প্রশ্ন জাগে, ইসলামে এই বিষয়ে কি বলে?

ইসলাম বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছে। রাসুল (সা.) হাদিসে বলেছেন, যে ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না, সে আমার উম্মত নয়। ব্যক্তিগতভাবে রাসুলের (সা.) জীবনে আমরা তার প্রতিফলন দেখতে পাই। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা প্রণিধানযোগ্য। আবু জেহেল ছিলেন তৎকালীন যুগের সমাজসেবক এবং ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন। নবীকে (সা.) ইসলাম প্রচার করার কাজে তিনি বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করেছেন। এমনকি রাসুল (সা.) নামাজ আদায়ের জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করতেন, সেই রাস্তায় আবু জাহেল লোকজন দিয়ে বড় একটি গর্ত করতেন, যাতে নবী (সা.) রাস্তা দিয়ে যেতে গর্তের মধ্যে পড়ে যান। কিন্তু মহান আল্লাহপাকের কী নিদর্শন, সেই গর্তে আবু জেহেল নিজেই পড়ে যান। অথচ প্রিয় নবী (সা.) আবু জাহেলকে ওই গর্ত থেকে উঠিয়েছিলেন। শুধু বড় হওয়ার কারণেই এই সম্মান দেখিয়েছিলেন। এর পরও রাসুলকে (সা.) আবু জাহেল কষ্ট দিয়েছেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, বড়দের অবশ্যই সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। ছোটদের ক্ষেত্রে কী বলব, তিনি ছিলেন এক অতুলনীয় মহামানব। একদিন এক ছোট্ট ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। এমন সময় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছেলেটির কাছে গেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছ কেন? তখন ছেলেটি তার দুঃখের কথাগুলো বলা শুরু করল। এই কথাও ছেলেটি বলল, আমি আমার দুঃখের কথা তো তার সঙ্গেই বলব। আমার আম্মু বলে দিয়েছেন, তোমার দুঃখ শোনার মতো ব্যক্তি হলেন একজনই। তিনি হলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এই কথা শুনে নবী (সা.) বললেন, আমিই সেই মুহাম্মদ, তুমি বলো, তোমার কী সমস্যা। তখন ছেলেটি বলল, আমি মায়ের কাছে থাকতাম; কিন্তু আমার আব্বু মারা যাওয়ায় আম্মু আরেকজনকে বিয়ে করেছেন। সে ব্যক্তি আমাকে সহ্য করতে পারে না। আমার আম্মু আমাকে ভালোবেসে চুমু খায়, আমাকে আদর করে; কিন্তু আমার সৎ আব্বুর এগুলো পছন্দ হয় না। আমাকে গালাগাল করে; এমনকি আমার আম্মুকে মারধর করে। এ কারণেই আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি। আমার আম্মু বলেছেন বিশ্বনবীর সঙ্গে দেখা করতে। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয় নবী অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলেটিকে বললেন, আজ থেকে যদি মুহাম্মদ (সা.) তোমার পিতা হয়ে যায় আর হজরত আয়েশা (রা.) যদি তোমার আম্মু হয়ে যায়, তাহলে কি তুমি থাকবে? তখন ছেলেটি বলল, অবশ্যই থাকব। সুতরাং ছেলেটি রাসুলের কাছেই থেকে গেল।

এই ছিল আমাদের প্রিয় নবীর (সা.) ছোটদের প্রতি স্নেহ। কিন্তু আজকের সমাজে দেখা যায়, ছোটরা বড়দের সম্মান করতে চায় না। কারণ আমরা পবিত্র কোরআনের আলোকে জীবন গড়তে পারছি না। কোরআনের আলোকে যদি জীবন গড়তে পারতাম, তাহলে অবশ্যই সুন্দর সমাজ উপহার দিতে পারতাম। আমরা এ কথাও বলতে পারি- সমাজে দেখা যায় ছোটরা বসে থাকে, বড়রা ছোটদের সামনেই গান-বাজনা, বিড়ি-সিগারেট এমনকি গাঁজা-মদও পান করছে। ফলে ছোটরাও তাদের সামনে অপকর্ম করতে কোনো দ্বিধাবোধ করছে না। যেখানে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সরাসরি ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয় তোমাদের ওপর মদ এবং জুয়া হারাম করা হয়েছে আর এটি শয়তানের কাজ- আল কোরআন। এ কথায় আমরা বলতে পারি, আমরা যদি পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে জীবন গড়ি, তাহলে অবশ্যই আমাদের দ্বারা সুশৃঙ্খল একটা সমাজ উপহার দেওয়া সম্ভব। আর সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়নে বড়দের শ্রদ্ধা-সম্মান ও ছোটদের স্নেহ ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম।

সর্বশেষ সংবাদ

ইউক্রেনে নতুন রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার উদ্বেগজনক : জাতিসঙ্ঘ

রাশিয়ার নতুন এক মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ইউক্রেনে হামলা নতুন করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ