করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকেই স্বাদ বা গন্ধ সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলেন। তারা যখন সুস্থ হয়ে ওঠেন তখন স্বাভাবিকভাবে আবার মুখের স্বাদ বা গন্ধ ফিরে পান। কিন্তু এখন ভিন্ন ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে। খবর বিবিসি বাংলার।
দেখা যাচ্ছে, খাবার, সাবান বা প্রিয়জনের গায়ের গন্ধ- যার স্বাদ বা গন্ধ আগে তাদের কাছে দারুণ মনে হতো, এর সবকিছুই তীব্রভাবে বিস্বাদ হয়ে পড়ছে। আর এটিকেই বলা হচ্ছে পারোসমিয়া, যাতে আক্রান্ত হবার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
করোনায় আক্রান্ত হবার পর গত সাত মাস ধরে পারোসমিয়ায় ভুগছেন ৪৭ বছর বয়সী ক্লেয়ার ফ্রি। এই নারী এখন পরিবারের জন্য রান্নার চেষ্টা করলেই সেটি শেষ পর্যন্ত কান্নায় রূপ নিচ্ছে।
তিনি বলেছেন, ‘গন্ধ আমাকে হতবিহবল করে তোলে। একটি পচা গন্ধে ঘর ভরে যায় এবং এটা অসহ্য।’
পেঁয়াজ, কফি, মাংস, ফল, অ্যালকোহল, টুথপেস্ট, ক্লিনিং উপকরণ কিংবা পারফিউম- সব কিছুতেই তার বমি ভাব চলে আসে। এমনকি ট্যাপের পানিও, যার ফলে তার জন্য কোন কিছু ধোওয়াটাও কঠিন হয়ে ওঠে।
গত বছর মার্চে আরও অনেকের মতো ক্লেয়ারও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যার ফলে স্বাদ গন্ধ হারিয়েছিলেন তিনি। মে ও জুনের মধ্যে স্বাদ গন্ধ আবার ফিরে এলেও ক্লেয়ারকে তার প্রিয় জিনিসগুলো থেকে দূরে সরে যেতে হয়।
কারণ এগুলোর মধ্য থেকে এক ধরনের টক গন্ধ আসছিলো এবং কখনো কিছু চুলায় দিলে মনে হতো এক ধরনের রাসায়নিক গন্ধ আসছে কিংবা অতিরিক্ত পুড়ে যাচ্ছে।
গ্রীষ্মকাল থেকে তিনি বেঁচে আছেন ব্রেড আর চিজ খেয়ে। কারণ একমাত্র এগুলোর গন্ধই তিনি সহ্য করতে পারছেন।
তিনি বলছেন, ‘আমার শক্তি বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই।’ এটি তাকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তিনি বলছেন অধিকাংশ দিনগুলোতে কান্নাই করেন তিনি।
ভীত ও হতভম্ব ক্লেয়ার ফ্রি’র বিষয়টি নিয়ে চ্যারিটি অ্যাবসেন্ট-এর মাধ্যমে একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যার সদস্য প্রায় ছয় হাজার। এদের প্রায় সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছিলেন এবং পরে পারোসমিয়ায় আক্রান্ত হন।
অ্যাবসেন্ট প্রতিষ্ঠাতা ক্রিসসি কেলি বলছেন, বিভিন্ন ধরনের পারোসমিয়া রয়েছে তাদের। অনেক সময় তারা গন্ধ কেমন পাচ্ছেন সেটা বোঝানোও কঠিন হয়ে পড়ে তাদের কাছে। কারণ এর আগে এমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় বর্ণনার জন্য যথাযথ শব্দও তারা খুঁজে পান না।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অন্তত ৬৫ ভাগ স্বাদ গন্ধ হারিয়েছেন এবং এদের মধ্যে অন্তত দশ ভাগ হয়তো পারোসমিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বা ফ্যান্টসমিয়ায় ভুগছেন- অর্থাৎ যা নেই তারও গন্ধ পাচ্ছেন।
রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ডঃ জেন পার্কার পারোসমিয়া নিয়ে আগে থেকেই পড়াশোনা করছিলেন। অ্যাবসেন্ট পারোসমিয়া ফেসবুক গ্রুপের অনেকের সাথে কাজ করছেন তিনি ও তার টিম। তিনি বলেছেন, বিশ্বের অন্তত ৬৫ লাখ মানুষ এখন দীর্ঘমেয়াদী পারোসমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
তারা বলছেন, কফি, সবজি, ফল, ট্যাপের পানি ও ওয়াইনের পাশাপাশি মাংস, পেঁয়াজ, রসুন বা চকোলেটও খারাপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে আক্রান্তদের মধ্যে।
ইউকে লিড ফর দি গ্লোবাল কনসোর্টিয়াম ফল কেমোসেন্সরি রিসার্চের ব্যারি স্মিথ বলছেন, খারাপটা ভালো এবং ভালোটা খারাপ- এটাই হলো পারোসমিয়ার একটি বৈশিষ্ট্য। এটি মানসিক স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
পারোসমিয়ার সাথে লড়াইয়ের জন্য কয়েকটি উপায় :
• রুম তাপমাত্রার খাবার খান।
• ভাজা খাবার, রোস্ট মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, কফি, চকোলেট পরিহার করুন।
• ভাত, নুডলস, দই, স্বাভাবিক ব্রেড ও স্টিমড ভেজিটেবল খাওয়ার চেষ্টা করুন।