ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত করোনা ভ্যাকসিন বণ্টনের কাজ শুরু হয়েছে। পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া থেকে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) করোনাটিকা কোভিশিল্ডের চালান ভারতের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু হয়। আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে ভারত সরকার। এর কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে।
এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীসহ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যারা সামনের সারিতে আছেন, এমন তিন কোটি কর্মী টিকা পাবেন সবার আগে। এরপর পাবে ২৭ কোটি মানুষ, যাদের বয়স ৫০ এর বেশি বা দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে যারা ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকাদান কর্মসূচি শুরুর কাজে নতুন গতি এল।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী হারদ্বীপ সিং পুরি এক টুইটে জানান, প্রথম দিন সাড়ে ৫৬ লাখ ডোজ টিকা বিভিন্ন শহরে পৌঁছে দেয়ার কাজ চলছে। গুজরাটের কর্মকর্তারা জানান, টিকা বিতরণের কাজটিকে তারা এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
গুজরাটের উপ মুখ্যমন্ত্রী নিতিন প্যাটেল বলেন, বিমানবন্দর থেকে টিকার চালান নিয়ে কোল্ড স্টোরেজে রাখা হবে যাতে সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকাদানকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া যায়।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে করোনাটিকা কোভিশিল্ডের ৭ লক্ষ ডোজ নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরের পৌঁছায় স্পাইসজেটের বিমান। বিমানবন্দরে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা ছিল ইনসুলেটেড ভ্যান।
জানা যায়, সেই টিকা ইনসুলেটেড ভ্যানে করে বাগবাজারের সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরে নিয়ে যাওয়া হবে। পরে এই মেডিকেল স্টোর থেকেই বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে সেগুলো।
সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার এক কোটি ১০ লাখ ডোজ কিনতে চুক্তি করেছে ভারত সরকার। প্রতি ডোজ টিকার জন্য তাদের দিতে হবে ২০০ রুপি (২.৭২ ডলার) করে।
এছাড়া ভারতীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেকের সঙ্গেও করোনাভাইরাসের টিকার জন্য চুক্তি করেছে দেশটির সরকার। এখন পর্যন্ত এ দুটি কোম্পানির করোনাভাইরাসের টিকাই ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে।
বিশ্বের সর্বাধিক টিকা উৎপাদনকারী সেরাম ইনস্টিটিউট বিতরণের জন্য এরইমধ্যে ৫ কোটি ডোজ টিকা মজুদ করেছে। বর্তমানে প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭ কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকার যোগান দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে তাদের, যা বাড়িয়ে আগামী মার্চ থেকে মাসে ১০ কোটি ডোজে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সেরাম ইনস্টিটিউটের।
যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভারতে এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৫ লাখ মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত করোনার টিকা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন বাংলাদেশও পাবে।