ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে তিন দিনের শান্তি আলোচনা কোনো ধরনের গঠনমূলক অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর চালানো সবচেয়ে বড় বিমান হামলাগুলোর একটি শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনা শনিবার শেষ হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপকে ‘গঠনমূলক’ বললেও উভয় পক্ষই স্বীকার করেছে যে, মস্কো সত্যিকারের শান্তির পথে এগোতে রাজি না হলে কোনো অগ্রগতির আশা নেই।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া এই হামলায় রাশিয়া মোট ৬৫৩টি ড্রোন ও ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। জ্বালানি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ছিল হামলার প্রধান লক্ষ্য। এই হামলায় ২৯টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণভাবে, এই হামলায় সাময়িকভাবে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এই ঘটনায় চুল্লিগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর তথ্যমতে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সফলভাবে ৫৮৫টি ড্রোন ও ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
আলোচনার অচলাবস্থা আবারও প্রমাণ করল যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আর পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর টানা অগ্রগতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান বিদ্যমান। সম্প্রতি শুধু নভেম্বর মাসেই রুশ সেনারা প্রায় ৫০৫ বর্গকিলোমিটার (১৯৫ বর্গমাইল) এলাকা দখল করেছেন। দোনেৎস্কের পোকরোভস্ক শহরের খুব কাছে পৌঁছে গেছে রুশ বাহিনী এবং মিরনোহরাদ শহর প্রায় চারদিক থেকে ঘেরাও হয়ে আছে।
বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা রাশিয়ার অনুকূলে থাকলেও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনার অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সোমবার লন্ডনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসও উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলি নাজহাত শমীম খান স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, পুতিনের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা শান্তি আলোচনার কারণে স্থগিত হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি করাটা অবশ্যই প্রয়োজন। অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি ইউক্রেনের ভূখণ্ডে নিজেদের মালিকানার দাবি থেকে সরে আসবেন না এবং শীতকালজুড়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে রুশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।

