ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু হলে ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা অনিবন্ধিত স্মার্টফোন বন্ধ হওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কমিশনার মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আগামী মাসের শুরুতে এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে। সেখানে অনিবন্ধিত স্মার্টফোনের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিটিআরসি কমিশনার মাহমুদ হোসেন বলছেন, বাজারে থাকা এমন স্মার্টফোনের সংখ্যা ৫০ লাখ। এসব হ্যান্ডসেটের ট্যাক্সের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেটগুলো নেটওয়ার্কে নিতে ডিসেম্বরের শুরুতে সরকারের সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীতে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত বৈধ ও নিরাপদ হ্যান্ডসেট ব্যবহারে এনইআইআরের গুরুত্ব বিষয়ে সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
অবৈধ ফোন বন্ধ করা, প্রতারণা এড়ানো এবং সরকারের রাজস্ব বাড়াতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর সিস্টেম চালু হবে জানিয়ে বিটিআরসি কমিশনার মাহমুদ হোসেন বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ বন্ধ হওয়া উচিত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারিত না হয়।
বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এনইআইআর চালু হলে দেশের নেটওয়ার্কে নিবন্ধনহীন বা আন-অফিসিয়াল মোবাইল সেটের ব্যবহার বন্ধ হবে। গত ২৯ অক্টোবর বিটিআরসিতে সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এনইআইআর ব্যবস্থা চালু হলে অবৈধভাবে আমদানিকৃত বা নকল মোবাইল সেট ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হবে। এর ফলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশে মোবাইল উৎপাদন শিল্প আরও সুরক্ষিত হবে।
এনইআইআর চালুর উদ্যোগে দেশের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছিলেন, এই ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের বিশাল ক্ষতির মুখে ঠেলে দেবে।
এ বিষয়ে সেমিনারে বিটিআরসি কমিশনার মাহমুদ হোসেন বলেন, সামনের মাসে এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা বসবেন। তারেই বিষয়টি দেখবেন।
তিনি বলেন, যাদের কথা বলা হচ্ছে তাদের কাছে কিছু ফোন আছে। আমার হিসাবে এটা ৫০–৬০ লাখ, এটা আনুমানিক। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে হয়তো ১০–১২ লাখ ফোন স্বাভাবিকভাবে নেটওয়ার্কে ঢুকবে। বাকি ৫০–৬০ লাখ ফোনের কী হবে? তাদেরকে নেটওয়ার্কে নেওয়ার জন্য বিটিআরসির টেকনিক্যাল মেকানিজম কিন্তু ওকে। বিটিআরসি এটা করতে পারবে। কিন্তু তারা যে নেটওয়ার্কে ঢুকবে তাদের ট্যাক্সের ব্যাপারটা কী হবে? এ ব্যাপারে আমরা আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এনবিআরকে চিঠি লিখেছি। ওই বিষয়টি নিয়ে হয়তো মিটিংটা হবে। সেখানে উইন-উইন একটা সল্যুশন হবে এবং আমরা যেন এটি (এনইআইআর) বাস্তবায়ন করতে পারি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাজারে থাকা ফোনগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি ধার্য করে নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হতে পারে।
এনইআইআর চালু হলে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে যাবে-এমন প্রচারণার বিষয়ে বিটিআরসি কমিশনার বলেন, বাজারে একটি জিনিস ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে স্মার্টফোনের দাম বাড়বে। আশা করি দাম বাড়বে না। আমরা বিটিআরসি সেটা দেখব। বরং স্মার্টফোনের দাম না বাড়াতে বিটিআরসির উদ্যোগ রয়েছে, যেন কিস্তিতে মানুষ স্মার্টফোন কিনতে পারে। এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে।
এনইআইআর সিস্টেমের সার্বিক দিক নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল হক। এসময় তিনি বলেন, নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা, সরকারের রাজস্ব ক্ষতি রোধ করা, অবৈধ সেট নেটওয়ার্কে প্রবেশ রোধ করা, ক্লোন ও চুরি রোধ করা, স্থানীয় মোবাইল কারখানা রক্ষার জন্য এনইআইআর বাস্তবায়ন করা উচিত।
মোবাইল ফোন ইনডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি এবং এডিসন ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহিদ, পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন রাজু, নগদের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অফ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, এনবিআরের ফার্স্ট সেক্রেটারি (কাস্টমস, পলিসি) রওনক উদ্দিন খান, স্মার্ট টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, সিনেসিস আইটির চিফ সল্যুশন্স অফিসার আমিনুল বারী শুভ্র, টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে ও সাধারণ সম্পাদক মাসদুজ্জামান রবিন বক্তব্য দেন।

