spot_img

আসমানি সাহায্যের সাক্ষী ‘জাবালে মালাইকা’

অবশ্যই পরুন

সৌদি আরবের ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরের কাছাকাছি অবস্থিত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য আসা আসমানি সাহায্যের অন্যতম নিদর্শন জাবালে মালাইকাহ। ‘জাবাল’ শব্দের অর্থ ফেরেশতা আর ‘মালাইকা’ শব্দের অর্থ হলো ফেরেশতারা। সে হিসেবে এর অর্থ দাঁড়ায় ফেরেশতাদের পাহাড়। বালুকাময় এই পাহাড়টি মুসলমানদের প্রতি মহান আল্লাহর বিরল ভালোবাসার নিদর্শন।

এটা সেই পাহাড় যেখানে মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের বাহিনী অবতরণ করিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) যখন সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মুশরিকদের মুখোমুখী হলেন এবং উভয় দল পরস্পরকে দেখতে পেল, তখন রাসুল (সা.) আল্লাহর দরবারে উভয় হাত তুলে দোয়া করতে লাগলেন এবং তার প্রভুর সাহায্য প্রার্থনা করলেন। মুসলমানেরাও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকলেন এবং আল্লাহর মদদ চাইলেন। আল্লাহ তাআলা এ সময় কোরআনের এই আয়াত নাজিল করলেন—তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করছিলে স্বীয় প্রভুর নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব ধারাবাহিকভাবে আগত এক হাজার ফিরিশতার মাধ্যমে। (সুরা আনফাল, আয়াত: ৯)

তারা মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে নিরস্ত্র ও সংখ্যায় কম সত্ত্বেও মুশরিক বাহিনীদের সঙ্গে লড়াই করেছেন এবং মহান আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে তাঁদের সাহায্য করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ করো, যখন তুমি মুমিনদের বলছিলে, তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে তোমাদের রব তোমাদের তিন হাজার নাজিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধরো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, আর তারা হঠাত্ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৩-১২৫)

সে মুসলিম বাহিনীদের সাহায্য করতে আসা ফেরেশতাদের কর্মকাণ্ড অনেক সাহাবিই অনুভব করেন। উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসের অংশে আছে, আবু যুমায়ল বর্ণনা করেন যে, আমার নিকট ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন যে, সেদিন একজন মুসলিম সৈনিক তার সামনের একজন মুশরিকের পিছনে ধাওয়া করেছিলেন। এমন সময় তিনি তাঁর উপর দিক থেকে বেত্রাঘাতের শব্দ শুনতে পেলেন এবং তার উপর দিকে অশ্বারোহীর এরু ধ্বনি শুনতে পেলেন। তিনি বলতেছিলেন, হে হায়জুম (ফেরেশতার ঘোড়ার নাম) সামনের দিকে অগ্রসর হও। তখন তিনি তার সামনের এক মুশরিক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে চিত্ হয়ে পড়ে আছে। আরো দেখেন যে, তার নাক-ক্ষতযুক্ত এবং তার মুখমণ্ডল আঘাতপ্রাপ্ত। যেন কেউ তাকে বেত্রাঘাত করেছে। আহত স্থানগুলো সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। (বেত্রের বিষাক্ততায়)। এরপর আনসারী ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে যাবতীয় ঘটনা বর্ণনা করলেন।

তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। এ সাহায্য তৃতীয় আকাশ থেকে এসেছে। পরিশেষে সেদিন মুসলিমগণ সত্তর জন কাফিরকে হত্যা এবং সত্তর জনকে বন্দী করলেন। (মুসলিম, হাদিস: ৪৪৮০) ইবনে ইসহাক (রহ.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘আরিশ’-এর ভেতর অবস্থানকালে কিছুক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তারপর জেগে উঠে বললেন, ‘সুসংবাদ গ্রহণ করো, হে আবু বকর! আল্লাহর সাহায্য এসে গেছে। এটি জিবরাইল, সে তার ঘোড়ার লাগাম ধরে এসেছে; তার দাঁতের ফাঁকে ধুলা লেগে আছে।’ (সিরাতে ইবনে হিশাম)

ইবনে আব্বাস বলেন, আমাকে বানু ঘিফার গোত্রের এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘আমি ও আমার এক চাচাতো ভাই একসঙ্গে রওনা দিলাম, যতক্ষণ না আমরা এক পাহাড়ে উঠলাম, যেখান থেকে বদরের যুদ্ধক্ষেত্র দেখা যাচ্ছিলো। আমরা তখন মুশরিক (অবিশ্বাসী) ছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, দেখি যুদ্ধের পর জয় কার হবে, তারপর বিজয়ী পক্ষের সঙ্গে মিলে লুটপাটে অংশ নেব। আমরা যখন পাহাড়ে ছিলাম, তখন একটি মেঘ আমাদের কাছে এসে থামল। আমরা সেই মেঘের ভেতর ঘোড়ার শব্দ শুনতে পেলাম, এবং একজনকে বলতে শুনলাম: ‘আগাও, হায়জুম!’ তখন আমার চাচাতো ভাইয়ের হূদয় যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, এবং সে সেখানেই মারা গেল। আর আমি প্রায় মরে যাচ্ছিলাম, কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নিলাম। (সিরাতে ইবনে হিশাম)

সম্ভবত বানু ঘিফার গোত্রের ব্যক্তি যে পাহাড়ের কথা বলেছেন, সেটাই বর্তমান জাবালে মালাইকাহ। হজ-ওমরার জন্য সৌদি আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র বদর প্রান্তর পরিদর্শনে গেলে এই পাহাড়ে অবশ্যই ঘুরে আসে। অনেকে মহান আল্লাহর গায়েবিদের সাক্ষী এই বালুকাময় পাহাড়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করার চেষ্টা করে।

সর্বশেষ সংবাদ

মৃতদেহ পানিতে ভাসে আর জীবিত মানুষ ডুবে যায়, বৈজ্ঞানিক কারণ জানুন

নদী বা পুকুরে ভেসে থাকা কোনো মৃতদেহের খবর আমাদের প্রায়ই চোখে পড়ে, অথচ জীবিত মানুষ পানিতে পড়লে বেশিরভাগ সময়ই...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ