spot_img

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা: তারেক রহমান

অবশ্যই পরুন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এই সরকারের কাজ কোনো দলের স্বার্থ বাস্তবায়ন নয়।

শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৫’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে মাতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোট।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের সময়কালে দেশের সবচেয়ে জনসমর্থিত ও জনপ্রিয় দল হওয়া সত্ত্বেও সারা দেশে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে দেড় লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ৭০০-র বেশি নেতাকর্মীকে গুম, অপহরণ ও খুন করা হয়েছিল। অকারণে রাতের বেলায় আদালত বসিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। আর এসবের মূল কারণ ছিল দেশে আইনের শাসন না থাকা।

তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিষ্টান, ডান বা বাম, ভিন্ন দল-মতের কেউই নিরাপদ ছিল না। ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা কিংবা ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে যে হামলা হয়েছিল, সেসব হামলাসহ দেশের কোথাও কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত বা বিচার হয়নি। গত দেড় দশকে আমি ও আমার নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন বক্তব্যে দেশের সুশীল সমাজ, সর্বদলীয় ও সর্বধর্মীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম, যাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাসাবাড়ি কিংবা উপাসনালয়ে সংঘটিত প্রতিটি হামলার নেপথ্য ঘটনা উদঘাটন করে সুষ্ঠু বিচার হয়। কিন্তু সেই দাবিগুলোর একটিও বাস্তবায়িত হয়নি, কোনো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত কমিশনও গঠন করা হয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে– ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন ছাড়া সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু– কোনো নাগরিকেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একমাত্র ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনই দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান– প্রতিটি ধর্মের প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার একটি বিশাল সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের রাজপথের কিছু সঙ্গীর ভূমিকা দেশের বহু মানুষের অধিকার ও সুযোগকে বিনষ্ট করার এক পরিস্থিতি তৈরি করছে। দেশ যদি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, তাহলে অতীতে পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হতে পারে।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের শাসনামলে বিরোধীরা যেভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করেছিল বাঁচার জন্য, আজ পতিত পরাজিত সেই ফ্যাসিবাদী অপশক্তিও একইভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে কি না, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানাই।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পতিত পরাজিত অপশক্তি যেন কোনো দলের আড়ালে গুপ্ত কৌশলে ভূমিকা রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এই গুপ্ত বাহিনীর অপকৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় হলো একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা ও বহাল রাখা। এ কারণেই বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত রেখেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি বরাবরই একটি শান্তিকামী, সহনশীল ও গণমুখী রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ভিন্ন দল ও ভিন্ন মতের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।

তারেক রহমান আরও বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এই সরকারের কাজ কোনো দলের স্বার্থ বাস্তবায়ন নয়।

তিনি বলেন, জনগণের রায় অনুযায়ী বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ পরিবারের নারীপ্রধানের নামে ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। একইভাবে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের সহযোগিতার মাধ্যমে যাতে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারেন, সেজন্য তাদের ফার্মার্স কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের বিশাল এক সমস্যা যুবসমাজের বেকারত্ব। এই বেকারত্ব দূর করতে তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা, যাতে তারা দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়– এই পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

জানুয়ারিতেই চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরছেন মেসি!

ইন্টার মায়ামির হয়ে দুর্দান্ত এক মৌসুম শেষ করার পথে লিওনেল মেসি। মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) গোলের রাজা হয়েছেন, দলকেও...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ