নিউইয়র্ক সিটি এখন নতুন মেয়র নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এই শহরের নেতৃত্বে আসতে লড়ছেন তিনজন প্রার্থী, যার মধ্যে ডেমোক্র্যাট মনোনীত জোহরান মামদানি এগিয়ে রয়েছেন স্পষ্ট ব্যবধানে।
নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশনসের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত আগাম ভোটে ৭ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি ভোট পড়েছে—যা শহরটির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড।
মেয়র নির্বাচনের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন জাতীয় পর্যায়ের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, বিশেষত মামদানির কারণে। যদি তিনি জয়ী হন, তবে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হবেন তিনি—একইসঙ্গে শহরের ইতিহাসে প্রথম প্রকাশ্য সমাজতান্ত্রিক নেতা।
মামদানি তার প্রচারণায় তুলে ধরেছেন ‘সহজলভ্যতা’ ও সাধারণ নাগরিকের অর্থনৈতিক চাপ কমানোর ইস্যু। তিনি ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত বাসিন্দাদের জন্য ভাড়া স্থগিত রাখা, বিনামূল্যে সার্বজনীন শিশু যত্ন, শহরজুড়ে ফ্রি বাস সেবা এবং কম দামে পণ্য সরবরাহে সিটি পরিচালিত মুদি দোকান চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এই প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের জন্য মামদানি প্রস্তাব করেছেন কর্পোরেট করহার ১১ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা—যা পার্শ্ববর্তী নিউ জার্সির সমান—এবং বছরে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি আয়কারীদের ওপর অতিরিক্ত ২ শতাংশ আয়কর আরোপ।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। কুওমো ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে পরাজয়ের পর স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তবে গভর্নর থাকাকালীন যৌন হয়রানি ও প্রতিশোধমূলক আচরণের অভিযোগে জর্জরিত তার অতীত এখন তার বড় বাধা।
অন্যদিকে, স্লিওয়া—ডানপন্থী কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও রেডিও উপস্থাপক—প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে ভোট বিভক্তি কুওমোর সম্ভাবনাকে আরও কমিয়েছে।
এদিকে, কুওমোকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মামদানিকে “কমিউনিস্ট” বলে আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মামদানি জিতলে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেবেন।
রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসের গড় জরিপ অনুযায়ী, মামদানি বর্তমানে এগিয়ে আছেন গড়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্টে। সেখানে মামদানির জনপ্রিয়তা ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ, কুওমোর ৩১ দশমিক ৮ দশমিক, আর স্লিওয়ার সমর্থন ১৬ দশমিক ৩ দশমিক।
অ্যাটলাস ইন্টেল-এর সাম্প্রতিক জরিপে মামদানির লিড ৫ পয়েন্টে সীমিত থাকলেও, দ্য হিল/এমারসন কলেজের জরিপে তিনি পেয়েছেন ৫০ শতাংশ সমর্থন—যা কুওমোর দ্বিগুণ। অধিকাংশ জরিপেই মামদানিকে দ্বিগুণ সংখ্যায় এগিয়ে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৬টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা) থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে, চলবে রাত ৯টা (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৮টা) পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সারিতে দাঁড়ানো সবাই ভোট দিতে পারবেন।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি

