মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারাধীন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি মনে করি, আল্লাহর পর বিচার নিষ্পত্তির প্রতিনিধি আপনি। আপনি ন্যায়বিচার করবেন। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’
আজ রোববার (২ নভেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর সামনে ইনুকে হাজির করা হয়। এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে এনে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর তার উপস্থিতিতেই প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগপত্র পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল।
এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল ইনুকে দাঁড়াতে বলে জানান, ‘আপনার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আপনি যদি গিল্টি প্লিড (দোষ স্বীকার) করেন, তাহলে এখানেই আমাদের কাজ শেষ হবে। অন্যথায় আমরা বিচার প্রক্রিয়া শুরু করব।’
জবাবে ইনু বলেন, ‘আমি কয়েকটি অভিযোগ শুনেছি, বাকিগুলো শুনিনি। তবে আমার আবেদনটি আপনারা আমলে নিচ্ছেন না।’
তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা আপনার আবেদনটি খারিজ করেছি। এখন বলুন— আপনি দোষ স্বীকার করবেন কি না?’
এ সময় ইনু বলেন, ‘যে অভিযোগগুলো পড়া হয়েছে, আমি সব শুনিনি।’ তখন চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘ফরমাল চার্জের কপি দিলে তিনি পড়তে পারবেন।’
এরপর ইনু বলেন, ‘অনুমতি দিলে মাননীয় ট্রাইব্যুনালকে আমি দুটি কথা বলতে চাই।’ কিন্তু প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখানে অন্য কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। তবুও ইনু জানান, তিনি কয়েকটি কথা বলে জবাব দিতে চান।
ট্রাইব্যুনাল তখন বলেন, ‘এটির সুযোগ নেই। আপনি আইনজীবী নিয়োগ করেছেন— যা বলার, তিনি বলবেন।’
তখন ইনু বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা দুইবার বলেছেন দেশে গায়েবি মামলা হচ্ছে। আইন উপদেষ্টাও গায়েবি মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, গায়েবি মামলার ঝড় থামছে না। এসব কথা শুনে আমি খুশি হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিএমএম কোর্টে আমার বিরুদ্ধে ৬০টি মামলা চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও গায়েবি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। আমি রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার, গায়েবি মামলার ঝড়ে আক্রান্ত। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ৫ আগস্টের আগে যা হয়েছে তা ভুলে যান।’
পরে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

