পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মাঝে সামরিক সংঘাত চলছে সপ্তাহখানেক সময় ধরে। এরই মাঝে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানের স্থানীয় তিন ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন। যার প্রতিবাদে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আগামী মাসে হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়। রশিদ খানদের জায়গায় সেই সিরিজে যুক্ত হয়েছে জিম্বাবুয়ে।
আগামী ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর পাকিস্তানের লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে এই ত্রিদেশীয় সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল (শনিবার) সূচি অপরিবর্তিত রেখে নতুন করে জিম্বাবুয়েকে যুক্ত করার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। এর আগে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির লক্ষ্যে এই সিরিজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
১৭ নভেম্বর রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু হবে স্বাগতিক পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের ম্যাচ দিয়ে। একই মাঠে ১৯ নভেম্বর লড়বে শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে। ২২ নভেম্বর লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হবে। সবমিলিয়ে প্রতিটি দল দু’বার করে মুখোমুখি হওয়ার পর শীর্ষ দুই দল ফাইনাল খেলবে ২৯ নভেম্বর, লাহোরে। বর্তমানে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দুই টেস্টের সিরিজ খেলছে পাকিস্তান, এরপর দুই দল ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজ খেলবে।
এদিকে, শুক্রবার আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের বিমান হামলায় তিন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হন। তারা প্রদেশের রাজধানী শারানায় ‘ফ্রেন্ডলি’ ম্যাচ খেলে বাড়ি ফেরার পথে ওই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। পরে আফগান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) জানিয়েছে, ‘তাদের মৃত্যু আমাদের ক্রীড়া কমিউনিটির জন্য একটি বিশাল ক্ষতি। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আফগান ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের হামলাকে বর্বর ও অনৈতিক উল্লেখ করে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক রশিদ খান বলেন, ‘বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো নিশ্চিতভাবে অনৈতিক এবং বর্বর আচরণ। এই অন্যায্য ও বেআইনি কর্মকাণ্ড মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন, যা কারও নজর এড়ায় না। নিষ্পাপ মানুষের প্রাণের বিষয় বিবেচনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন ফিক্সচার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এসিবিকে স্বাগতম। কঠিন এই সময়ে আমি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি, আমাদের জাতীয় মর্যাদা অবশ্যই সবকিছুর ঊর্ধ্বে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানি কিংবদন্তি শহীদ আফ্রিদিও নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘পাকিস্তান সব সময় আফগান ভাইদের পাশে থেকেছে, তাদের দুঃখ-কষ্টকে নিজেদের দুঃখ হিসেবে দেখেছে। সীমান্ত খুলে দিয়েছে ভাইদের জন্য। ৪০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আমিও ৩৫০টি আফগান পরিবারের দেখাশোনা করি। তবু খুব দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান এসব উপকার ভুলে সীমান্তে প্রকাশ্য আগ্রাসন চালিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সেনারা যথাযথ জবাব দিয়েছে।’