ইসরায়েলি বাহিনী গাজা অভিমুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র নৌযানগুলোকে বাধা দিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে এবং কর্মীদের আটক করেছে। আটক হওয়া কর্মীদের মধ্যে জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন। তারা এ সময় অন্তত ১৩টি জাহাজ জব্দ করেছে। এসব জাহাজের যাত্রীদের আটক করে ইসলায়েলে নিয়ে গেছে দেশটির নৌবাহিনী।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাতে মোট নৌযানের সংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৫১টি।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি নৌবাহিনী এই নৌবহরের মোট ১৩ নৌযান থামিয়ে দিয়েছে।
কিছু সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী অন্তত ছয়টি নৌযান, যেমন: দেইর ইয়াসিন, হিউগা, স্পেক্টার, আদারা, আলমা ও সিরিয়াস থামিয়ে দিয়েছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, আটক হওয়ার পরও বাকি নৌযানগুলো গাজার দিকে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। তবে, ইসরায়েলি বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে ফ্লোটিলার সঠিক সংখ্যা এবং তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া কঠিন হচ্ছে।
ত্রাণবাহী নৌবহরটি গাজার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। গাজা থেকে এটি এখন মাত্র ৪৭ নটিক্যার মাইল দূরে রয়েছে।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’য় ইসরায়েলের অভিযানকে ‘অবৈধ হামলা’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তুরস্ক। তুরস্কের প্রতিনিধি দল বুধবার (০১ অক্টোবর) ইসরায়েলের বাধা ও হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিরস্ত্র মানবিক সহায়তাকর্মীদের ওপর এ অভিযান ছিল অবৈধ হামলা।
লিখিত এক বিবৃতিতে প্রতিনিধি দল জানায়, আলমা, সিরিয়াস ও আদারা নামের জাহাজগুলো স্থানীয় সময় বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি সেনারা অবৈধভাবে থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অভিযানের আগে ইসরায়েল সচেতনভাবে জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত করে এবং বিপদ সংকেত পাঠানোর প্রচেষ্টা আটকে দেয়।
প্রতিনিধি দল জানায়, “কয়েকটি জাহাজ আটকানো হলেও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এখনো গাজার উপকূল থেকে ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে এবং যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।”
তারা বিশ্বের বিভিন্ন সরকার, রাষ্ট্রনেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে, জাহাজে থাকা সবার নিরাপত্তা ও মুক্তি নিশ্চিত করতে এবং ঘটনাটির ওপর নিবিড় নজর রাখতে।
এর আগে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেস্কা আলবানিজে এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ফ্লোটিলাটিকে বাধাহীনভাবে যেতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ইসরায়েলের হামলা ও ফ্লোটিলায় থাকা কর্মীদের (যার মধ্যে দুজন কলম্বিয়ানও রয়েছেন) আটক করার ঘটনায় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো দেশটির সব ইসরায়েলি কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছেন।
এক্স-এ দেওয়া পোস্টে পেত্রো জানান, কলম্বিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি তিনি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করেছেন। তিনি একে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে সংঘটিত “নতুন আন্তর্জাতিক অপরাধ” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অন্য এক পোস্টে পেত্রো লিখেছেন, “এখানেই নেতানিয়াহু তার বিশ্বব্যাপী ভণ্ডামি দেখালেন এবং কেন তিনি একজন আন্তর্জাতিক অপরাধী—যাকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা উচিত, তা প্রমাণ করলেন।”
তিনি আরও জানান, কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং তিনি আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ফিলিস্তিন পরিচালিত আইনি সংগঠন আদালাহ-এর পরিচালক হাসান জাবারিন বলেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলের এ অভিযানের মাধ্যমে ফ্লোটিলা থামানো “গ্রেপ্তার নয়, বরং অপহরণ”।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের হয় দেশ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে, নইলে আদালতে হাজির করা হতে পারে।
সূত্র: আনাদলু ও আল জাজিরা

