ডিজিটাল যুগে শিশুদের দৈনন্দিন জীবন মোবাইল, ট্যাবলেট, অনলাইন ক্লাস, গেমিং এবং স্ট্রিমিং-এ ব্যস্ত। তবে এবার নতুন গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত বিনোদনমূলক স্ক্রিন ব্যবহার শুধু মনোযোগ বা মেজাজ নয়, হৃদ্য স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত একটি নতুন স্টাডি জানিয়েছে, প্রতিটি অতিরিক্ত ঘণ্টা বিনোদনমূলক স্ক্রিন টাইম শিশুদের কার্ডিওমেটাবলিক ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে যখন ঘুমের পরিমাণ কম থাকে।
গবেষকরা ১ হাজারের বেশি মা ও শিশু-কিশোরদের নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। স্ক্রিন টাইম অভিভাবক এবং শিশু-কিশোরদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে সেটা জানতে। এ গবেষণায় তাদের ঘুম এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অ্যাক্সেলরোমিটার দিয়ে মাপা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত এক ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের ঝুঁকি ০.০৮ স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন এবং কিশোরদের ঝুঁকি ০.১৩ স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
গবেষণায় ঘুমের গুরুত্বের বিষয়টিও জানা গেছে। দেরিতে কিংবা অল্প ঘুমানো শিশুদের ঝুঁকি আরও বেশি দেখা গেছে। প্রায় ১২ শতাংশ ঝুঁকি স্ক্রিন টাইম এবং কার্ডিওমেটাবলিক সমস্যার মধ্যে ঘুমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। এছাড়া ৩৭টি রক্ত-ভিত্তিক বায়োমার্কার শনাক্ত করা হয়েছে, যা স্ক্রিন ব্যবহার ও মেটাবলিক পরিবর্তনের মধ্যে সংযোগ নির্দেশ করে।
এই গবেষণার ফলাফলের প্রভাব ভারতীয় শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিশেষ করে অনলাইন ক্লাস এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে শিশুদের স্ক্রিন টাইম বেড়েছে, ঘুমের পরিমাণ কমছে এবং শিশুদের মধ্যে স্থূলতা ও ইনসুলিন প্রতিরোধের সমস্যা বাড়ছে।
শিশুদের স্ক্রিন টাইম সীমিত করতে অভিভাবকরা নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- দৈনিক স্ক্রিন টাইম দুই ঘণ্টার কম রাখুন, স্কুল-সংক্রান্ত কাজ বাদে।
- পরিবারের মধ্যে স্ক্রিন-ফ্রি জোন ও সময় নির্ধারণ করুন, যেমন খাবারের সময় বা ঘুমের আগে।
- ঘুমের আগে অন্তত এক ঘণ্টা স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন, পরিবর্তে গল্প, হালকা বই পড়া বা শান্ত সঙ্গীত ব্যবহার করতে পারেন।
- শিশুদের জন্য বাইরে বা ঘরের মধ্যে শারীরিক খেলার সুযোগ তৈরি করুন।
- নিজের স্ক্রিন ব্যবহার সীমিত করুন; শিশু আপনার অভ্যাস অনুসরণ করে।
- হাতে-কলমের হবি বা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের প্রতি উৎসাহ দিন।
- প্রয়োজন অনুযায়ী প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
গবেষকরা বলছেন, স্ক্রিন টাইম কমানো ও ঘুম এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের রুটিন অনুসরণ শিশুর হৃদ্য স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সহায়ক। এটি শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি