spot_img

ইসলামের প্রথম নারী নৌসেনা

অবশ্যই পরুন

ইসলামের প্রথম নারী নৌসেনা ছিলেন উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রা.)। একই সঙ্গে সামুদ্রিক অভিযানে প্রথম শহিদা নারীও ছিলেন তিনি। উম্মে হারাম (রা.) খাজরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখার কন্যা। হিজরতের আগে মদিনার একদল লোক মক্কায় এসে রাসুল (সা.)-এর হাতে বায়আত হন, যা ইতিহাসে ‘বায়আতে আকবাহ’ নামে প্রসিদ্ধ।

বায়আতের পর এই দল মদিনায় ফিরলে উম্মে হারাম (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রা.) প্রখ্যাত সাহাবি আনাস (রা.)-এর খালা (এই হিসেবে উম্মে সুলাইমের বোন) এবং উবাইদা ইবনে সামিত (রা.)-এর স্ত্রী। মতান্তরে আমর ইবনে কায়েসের স্ত্রী। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উভয়ই তার স্বামী ছিলেন এবং এটিই অধিক শুদ্ধ।

অনেক বর্ণনায় পাওয়া যায়, উম্মে হারাম (রা.) রাসুলের (সা.) দুধসম্পর্কীয় খালা। মতান্তরে রক্তসম্পর্কীয় খালা বলেও কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে। আবার কারো মতে, উম্মে হারাম (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর পিতা বা চাচাদের খালা। কেননা রাসুল (সা.)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিবের মা ছিলেন নাজ্জার গোত্রের কন্যা।

রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় শুভাগমনের পর কুবায় দুই সপ্তাহ অবস্থান করেন। সে সময় তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা মসজিদে কুবা নামে পরিচিত। এই মসজিদের পাশে অর্থাৎ কুবাপল­ীতে ছিল উম্মে হারামের বাড়ি।

রাসুল (সা.) প্রতি শনিবার মসজিদুল কুবাতে যেতেন। কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো বাহনে চড়ে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৯৩)

রাসুল (সা.) মসজিদুল কুবাতে গেলে প্রায়ই উম্মে হারামের বাড়িতে যেতেন। দুপুরে খাবার খেয়ে তার ঘরে বিশ্রাম নিতেন। এমনই একদিন ঘটল ভিন্ন এক ঘটনা। রাসুলকে (সা.) খাবার খাওয়ান।

খাবার শেষ হলে তিনি বিশ্রাম নেন, উম্মে হারাম রাসুলের (সা.) মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এ অবস্থায় ঘুমিয়ে যান। হঠাৎ তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে ওঠেন। উম্মে হারাম বেশ অবাক হয়ে জানতে চান আল্লাহর রাসুল! আপনার হাসির কারণ কী?

রাসুল (সা.) জানান, তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। বলেন, উম্মতের একটি দলকে সমুদ্রের মাঝে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হলো। তারা সমুদ্রের মাঝে জাহাজের পাটাতনে এমন অবস্থায় আরোহী, যেমন বাদশাহ তার জৌলুসপূর্ণ সিংহাসনের ওপর।

এই স্বপ্ন ছিলো একটি ভবিষ্যদ্বাণী। মুসলিমদের তখন কোনো নৌবাহিনী ছিল না। এমনকি আবু বকর (রা.) বা উমর (রা.)-এর খিলাফতকালেও মুসলিমদের নৌবাহিনী ছিল না। ফলে এই ভবিষ্যদ্বাণী সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিল বিস্ময়কর। উম্মে হারাম (রা.) অনুরোধ করেন, ‘আল­াহর রাসুল, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, আমাকে যেন সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করেন।’

তিনি প্রার্থনা করলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। আবারও হাসতে হাসতে ঘুম থেকে উঠলেন। উম্মে হারাম (রা.) হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে আগের মতো বললেন এবং জানালেন যে, ‘তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৮৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) খালা উম্মে হারামকে শাহাদাতের সুসংবাদ দেন। ফলে উম্মে হারাম জীবিত থাকাবস্থায় ‘শহীদা; (নারী শহীদ) উপাধি লাভ করেন। কেউ কেউ তাঁকে এই নামে ডাকত। (ড. আব্দুল মাবুদ, আসহাবে রাসুলের জীবনকথা: ৬/১৫১)

তারপর ইতিহাসের নানা বাকবদলের মধ্য দিয়ে সময় বয়ে যায় আপন গতিতে। একসময় রাসুল (সা.) পরলোকগমন করেন। শুরু হয় মহান চার সাহাবির খেলাফতকালের সূচনা। পর্যায়ক্রমে আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)ও দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। অন্যদিকে উম্মে হারাম (রা.) আশায় বসে থাকেন, কবে সেই সুবর্ণ সুযোগ আসবে।

প্রায় ২০-২৫ বছর পরের ঘটনা। তখন উসমান (রা.)-এর খেলাফতকাল চলছিল। তৎকালীন সিরিয়ার গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন আমিরে মুয়াবিয়া (রা.)। তিনি উসমান (রা.)-কে নৌ-অভিযানের প্রস্তাব দেন। খলিফা উসমান (রা.) তার অনুমতি দেন।

মুয়াবিয়া (রা.) অভিযান চালান বর্তমান ইউরোপের সাইপ্রাসে। যোদ্ধাদের মধ্যে রাসুল (সা.)-এর কয়েকজন সাহাবি সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উবাইদা ইবনে সামিত (রা.); উম্মে হারামের স্বামী।

মুসলিম বাহিনীর প্রথম নৌ অভিযানে স্বামীর সঙ্গে উম্মে হারাম (রা.) অংশগ্রহণ করেন। মুসলিম বাহিনী যুদ্ধ ছাড়াই সাইপ্রাস জয় করে। বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনী বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন একদিন উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রা.) তাঁর ঘোড়া থেকে পড়ে যান এবং ঘাড়ে আঘাত পান। সেই জখমের ফলে তিনি ইন্তেকাল করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৮৮, ৭০০২)

এরই মধ্য দিয়ে রাসুলের (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয় এবং উম্মে হারাম বিনতে মিলহান প্রথম নারী নৌ-সেনা হিসেবে বিবেচিত হন। মদিনায় জন্মগ্রহণ করা সেই নারী সাহাবিকে সমাধিস্থ করা হয় সাইপ্রাসে।

সর্বশেষ সংবাদ

চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নামবে: প্রত্যাশা গভর্নরের

চলতি অর্থবছরে দেশের মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ