মেয়েদের কোপা আমেরিকার ইতিহাস মানেই যেন ব্রাজিলের জয়যাত্রা। নয়টি আসরের মধ্যে আটবার শিরোপা জিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আগেই প্রমাণ করেছে সেলেসাও নারীরা। এবারের দশম আসরেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে তারা। সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ব্রাজিল। শুধু তাই নয়, এই জয়ের মাধ্যমে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকেও সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে তারা—এক ম্যাচেই দুই আনন্দ সেলেসাও শিবিরে।
ইকুয়েডরের রদ্রিগো পাস দেলগাদো অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রতিটি বিভাগেই দারুণ দাপট দেখিয়েছে ব্রাজিলের মেয়েরা। ম্যাচের প্রথমার্ধেই তারা উরুগুয়ের জালে তিনবার বল জড়ায়। দ্বিতীয়ার্ধে এক গোল করে ব্যবধান কমালেও তা যথেষ্ট ছিল না উরুগুইয়ানদের জন্য। এক লাল কার্ডে খানিক বাদেই ১০ জনের দলে পরিণত হয় উরুগুয়ে। পরে আরও দুই গোল হজম করে তারা রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে। বল পজেশনেও স্পষ্ট ব্যবধানে (৬৯ শতাংশ) এগিয়ে ছিল মার্তা সিলভারা।
আগেরদিন গোলশূন্য ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল কলম্বিয়া। আগামী শনিবার দিবাগত রাতে কোপার শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে লড়বে ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার মেয়েরা। অবশ্য এই দুটি দেশই গ্রুপপর্বে একসঙ্গে ছিল, পরস্পরের দেখায় খেলার নিষ্পত্তি হয় ড্র দিয়ে। এখন পর্যন্ত উভয় দলই অপরাজেয়। ব্রাজিল ৫ ম্যাচের চারটিতে (আরেকটি ম্যাচ ড্র) এবং কলম্বিয়া তিন ম্যাচে (ড্র দুটিতে) জিতেছে।
প্রথমার্ধেই ব্রাজিলিয়ান মেয়েরা জয়ের কক্ষপথ তৈরি করে ফেলেছিল। আর্থুর ইলিয়াসের শিষ্যদের সামনে উরুগুয়ান মেয়েরা ঠিকঠাক নিঃশ্বাসই নিতে পারছিলেন না। যদিও পঞ্চম মিনিটে প্রথম সুযোগটিই ছিল উরুগুয়ের সামনে। আকুইনোর ক্রসে বল পেয়ে ওয়েন্ডি কারবালো শট নেন, সেটি বেশ ভালোভাবেই ঠেকিয়েছেন ব্রাজিল গোলরক্ষক ক্লদিয়া। একাদশ মিনিটে সেলেসাও কিংবদন্তি মার্তার ক্রস আমান্দা গুতিয়েরেসের হেড হয়ে উরুগুয়ের জালে জড়ায়।
মিনিট দুয়েক বাদেই ফের ব্রাজিলের গোল। বক্সের ভেতর বল পেয়ে এবার স্কোরবোর্ডে নাম তোলেন গিও গারবেলিনি। ২৬ মিনিটে তৃতীয়বার ম্যাচে লিড নেয় ব্রাজিল। এবার কিংবদন্তি মার্তার সামনে সুযোগ করে দেয় পেনাল্টি। যেখানে তিনি সফল স্পট কিক নিয়েছেন। ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় উভয় দল। দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটেই কিছুটা হেলেদুলে খেলতে থাকা ব্রাজিলের বিপক্ষে ব্যবধান কমায় উরুগুয়ে। যদিও তাতে ব্রাজিল ডিফেন্ডার ইসা হাসই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। কর্নার থেকে আসা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে জড়ান নিজেদের জালে।
উরুগুয়ের সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। উল্টো ৫৮ মিনিটে ইয়ামিলা মারিয়ানা লাল কার্ড দেখায় ১০ জনের দলটি আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। যার সুফল পুরোপুরি আদায় করে নিয়েছে ব্রাজিল। ৬৫ মিনিটে আমান্দা ফ্রি-কিক থেকে ব্যক্তিগতভাবে দ্বিতীয় এবং দলের চতুর্থ গোলটি করেছেন। দুদিনিয়া ৮৬ মিনিটে ঠোকেন শেষ পেরেক, বক্সের ভেতর থেকে তার নেওয়া শট ঠেকানো কঠিন ছিল উরুগুয়ে কিপারের জন্য। স্কোরলাইন পরিণত হয় ৫–১ এ।