রাশিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি সতর্ক করেছেন, এই উত্তেজনা যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে তা অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে এবং মস্কো ও বাকুর সম্পর্কের মধ্যে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ ডেকে আনতে পারে।
আজারবাইজান সফর শেষে দেশে ফেরার পথে বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা চাই না এই উত্তেজনা এমন কোনো মোড়ে গিয়ে পৌঁছাক, যা দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ও আজারবাইজান উভয় দেশের মধ্যেই এমন প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে সক্ষম। তুরস্ক সবসময়ই কূটনৈতিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দেবে।
এরদোয়ান উল্লেখ করেন, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিচ্ছেন।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তিচুক্তি প্রসঙ্গে এরদোয়ান বলেন, এই চুক্তি অঞ্চলটির জন্য এক নতুন ও ঐতিহাসিক সুযোগের জানালা খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে জাঙ্গেজুর করিডর পশ্চিম আজারবাইজানকে নাখিচেভান অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে। এটি কেবল আজারবাইজানের নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক জাঙ্গেজুর করিডরকে একটি ‘ভূ-অর্থনৈতিক বিপ্লবের’ অংশ হিসেবে দেখে। প্রথমদিকে আর্মেনিয়া এই করিডরের বিরোধিতা করলেও এখন তারা আরও নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক সংহতির পথে এগিয়ে আসছে।
তিনি জানান, এই শান্তিচুক্তির কূটনৈতিক কাঠামো ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং ব্রাসেলস, মস্কো ও ত্বিবিলিসিতে ২০২৪ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চুক্তির চূড়ান্ত পাঠে সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
এরদোয়ান জানান, আজারবাইজান ও ইরাক উভয় দেশই এই প্রকল্পকে জোরালো সমর্থন দিচ্ছে।
প্রতিরক্ষা ও এফ-৩৫ ইস্যু
ন্যাটোর সাম্প্রতিক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর কথা জানিয়ে এরদোয়ান বলেন, এ নিয়ে গ্রিসের উদ্বেগ অমূলক। তুরস্ক কোনো দেশের প্রতি হুমকি নয়; বরং যারা তুরস্কের স্বার্থে আঘাত হানে না, তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক রাখতে চায়।
তবে এই বিলম্বিত বিতরণকে তুরস্কের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবেও দেখছেন এরদোয়ান।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
ইসরায়েলের চলমান হামলার বিষয়ে এরদোয়ান বলেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে অঞ্চলটিতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ফলে গাজাতেও একটি যুদ্ধবিরতির পথ খুলেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ন্যাটো সম্মেলনের প্রথম রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার বিষয় তুলে ধরে এরদোয়ান বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি, আপনারাই একমাত্র নেতানিয়াহুকে বোঝাতে পারেন। বিশেষ করে খাবারের লাইনে মানুষ মারা যাচ্ছে, দয়া করে হস্তক্ষেপ করুন।’
এর উত্তরে ট্রাম্প ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এরফলে এখন ৬০ দিনের একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা আলোচনায় এসেছে। এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর চাপই এই প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা রাখবে।
সিরিয়া ইস্যু
সিরিয়ায় সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে বৈধতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তুরস্ক মেনে নেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার ভেতরে সব সশস্ত্র গোষ্ঠী নিরস্ত্র করতে হবে এবং পুরো ভূখণ্ডে সিরিয়ান সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
এছাড়া উত্তর সিরিয়ায় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল, লজিস্টিকস হাব এবং সীমান্তবাজার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর সেখানে উন্নয়নের গতি বাড়বে বলেও আশাবাদ জানান এরদোয়ান। তিনি বলেন, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ সিরিয়ার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস সহায়তা দিতেও প্রস্তুত।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।