spot_img

যুদ্ধ বিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচ প্রাচীন নগরী

অবশ্যই পরুন

যুদ্ধ শুধু জীবন আর প্রকৃতি ধ্বংস করে না, যুদ্ধ ধ্বংস করে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যও। ২০০৩ সালে পশ্চিমা সামরিক জোট মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন চালানোর পর সেখানে যে ভয়াবহ সংঘাতের সূচনা হয়, তার জেরে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক প্রাচীন নগরী ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়েছে হাজার বছরের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এমনই পাঁচটি প্রাচীন নগরীর পরিচয় তুলে ধরা হলো—

১. আলেপ্পো :
সিরিয়ার প্রাচীন নগরী আলেপ্পোর আরবি নাম হালব। আলেপ্পো পৃথিবীর সেসব প্রাচীন নগরীর অন্যতম যা এখনো নগর হিসেবে টিকে আছে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে আলেপ্পো নগরীর গোড়াপত্তন। পৃথিবীর বিভিন্ন সাম্রাজ্য আলেপ্পো শাসন করে। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী আলেপ্পো জয় করে। উমাইয়া আমলে আলেপ্পো ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র। মুসলিম শাসকদের ভেতর আইয়ুবীয় শাসকরাই আলেপ্পোর উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন। উসমানীয় শাসনামলে প্রাচীন এই নগরী ছিল সিরিয়ার দ্বিতীয় প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র। পশ্চিমা মদদপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোর নির্বিচার বোমা বর্ষণ এবং বহুপাক্ষিক সংঘাতে আলেপ্পো নগরী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত প্রাচীন আলেপ্পোর বড় অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে।

২. মসুল :
উত্তর ইরাকের প্রধান শহর মসুল। বাগদাদের পর মসুল ইরাকের বৃহৎ শহর। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে আক্কাদিয়ান সাম্রাজ্যের শাসনামলে মসুল শহরের গোড়াপত্তন হয়। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ওমর (রা.)-এর যুগে মসুল মুসলমানের শাসনাধীন হয়। সাহাবি রিবই ইবনে আফকাল (রা.) মসুল জয়ে নেতৃত্ব দেন। আব্বাসীয় আমলে মসুল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতা চর্চায়ও এগিয়ে ছিল মসুল। ইরাকে পশ্চিমা আগ্রাসনের পর সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোর সংঘাতে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। মসুলের প্রাচীন নগরী নিনেভেহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩. পালমিরা :
মধ্য সিরিয়ার প্রাচীন নগরী পালমিরা। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। রোমান আমলে পালমিরা ছিল একটি সমৃদ্ধ নগরী এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। বৃহত্তর শাম অঞ্চলের বাণিজ্য পথগুলো পালমিরায় এসে মিলিত হয়েছিল। এখান থেকেই পারস্য অঞ্চলে বাণিজ্য কাফেলা পরিচালিত হতো। পালমিরা একটি মরুদ্যান হওয়াতে যুগ যুগ ধরে তা বাণিজ্য কাফেলাগুলোর বিশ্রামস্থল ছিল। খলিফা ওমর (রা.)-এর যুগে বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) পালমিরা জয় করেন। মুসলিম শাসনামলে এই শহর ছিল গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি। তবে শহরটি প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব হারায়। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা মদদপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোর নির্বিচার বোমা বর্ষণ এবং বহুপাক্ষিক সংঘাতে পালমিরার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস হয়।

৪. মারিব :
ইয়েমেনের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও প্রাচীন শহর মারিব। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সাবা সম্প্রদায়ের আবাসভূমি এটি। সুলাইমান (আ.)-এর যুগে রানি বিলকিস মারিব শাসন করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেই ইয়েমেনের একাংশ মুসলমানরা জয় করে। তবে মারিবসহ ইয়েমেনের অবশিষ্ট অংশ আবু বকর ও ওমর (রা.)-এর আমলে জয় করা হয়। সম্প্রতি ইসরাইল ও আমেরিকার আক্রমণে মারিবের প্রাচীন বাঁধসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস হয়েছে।

৫. গাজা :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত গাজা নগরীর ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছরের পুরাতন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ অব্দে প্রাচীন মিসরীয়রা গাজা অঞ্চল শাসন করত। এরপর ফিলিস্তিন অঞ্চলে একে একে আসিরীয়, গ্রিক, হেলেনিস্টিক, সেলেউসিড, হাসমোনিয়াস, পার্সিয়ান, রোমান ও মুসলমানদের আগমন ঘটে। লৌহ যুগে গাজা অঞ্চলে মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটলেও খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর আগে নগর হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় কেনআনি সম্প্রদায়ের হাতে। কেনআনি সম্প্রদায় থেকে ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। গাজা ছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর একটি। ফিলিস্তিন অঞ্চলে মুসলিম বাহিনী সর্বপ্রথম রোমান বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিল গাজার ‘দায়িন’ গ্রামে। রাসুলুল্লাহ (সা.) গাজা বিজয়কারী বাহিনীকে সুসংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি গাজা ও আসকালানের বরপুত্রদের সুসংবাদ দিচ্ছি।’ (দাইলামি : ২/২৭০)
সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম বোমাবর্ষণে ঐতিহাসিক এই নগরী গাজা ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।

তথ্যঋণ : আল জাজিরা, দ্য নিউ আরব, ইসলামিক হিস্টোরি ডটকম, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ও উইকিপিডিয়া

সর্বশেষ সংবাদ

রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানো নিয়ে রুলের চূড়ান্ত শুনানি ৭ জুলাই

রাষ্ট্রপতিকে শপথ কে পড়াবেন স্পিকার নাকি প্রধান বিচারপতি, এ বিষয়ে রুলের চূড়ান্ত শুনানি ৭ জুলাই নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ