spot_img

ইসলামে শোক পালনের নিয়ম

অবশ্যই পরুন

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ একটি স্বাভাবিক আবেগ। ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেনি। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর দ্বারা মানুষের মন প্রশান্ত এবং আল্লাহর প্রতি ধৈর্যশীল হয়। এ সংক্রান্ত কয়েকটি নিয়ম কানুন উল্লেখ করা হলো—

শোক পালনের সময়সীমা
মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের জন্য তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করার অনুমতি আছে। তবে স্ত্রীর জন্য স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস ১০দিন শোক পালন করতে হবে। এর চেয়ে বেশি দিন শোক পালন করা ইসলামসম্মত নয়।

জয়নাব বিনতে আবু সালামা (রা.) বলেন, যখন শাম (সিরিয়া) থেকে আবু সুফিয়ান (রা.)-এর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছল, তার তৃতীয় দিন উম্মে হাবিবা (রা.) হলুদ বর্ণের সুগন্ধি আনালেন এবং তার উভয় গাল ও বাহুতে মাখলেন। তারপর বলেন, অবশ্য আমার এর কোন প্রয়োজন ছিল না, যদি আমি নবী কারিম (সা.)-কে একথা বলতে না শোনতাম, যে স্ত্রীলোক আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে স্বামী ছাড়া অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করা হালাল নয়। অবশ্য স্বামীর জন্য সে চার মাস ১০ দিন শোক পালন করবে। (বুখারি, হাদিস : ১২৮০; মুসলিম, হাদিস : ৩৫৯১)

নীরবে কান্না করা জায়েজ
শোক পালনের সময় নীরবে কান্না করা জায়েজ। এটা মৃত ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা, দুঃখ ও প্রার্থনা প্রকাশ করে। ইব্রাহিম (রা.)-এর ইন্তেকালে রাসুল (সা.) নিঃশব্দে কান্না করেছেন। তখন আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আর আপনিও (কাঁদছেন?) তখন তিনি বলেন, ইবনে আওফ ! এ হচ্ছে মায়া-মমতা। তারপর পুনঃবার অশ্রু ঝরতে থাকল, এরপর তিনি বলেন, অশ্রু প্রবাহিত হয় আর হূদয় হয় ব্যথিত। তবে আমরা মুখে তাই বলি যা আমাদের রব পছন্দ করেন। আর হে ইবরাহিম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা অবশ্যই শোকাভিভূত। (বুখারি, হাদিস : ১২২৫)

শোকের দিনে রান্না-বান্না
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে চুলা জ্বালানো বা রান্নাবান্না করা নিষিদ্ধ নয়। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও রান্না করা যাবে। তবে প্রতিবেশীদের দায়িত্ব হলো মৃতের বাড়ির লোকদের খাবারের ব্যবস্থা করা। জাফর (রা.)-এর ইন্তিকালের খবর আসার পর নবী কারিম (সা.) (আহলে বায়তকে) বলেন, তোমরা জাফরের পরিবার-পরিজনের জন্য খাবার তৈরি করো। কেননা তাদের ওপর এমন এক বিপদ এসে পড়েছে, যা তাদের রান্নাবান্না করে খেতে বাধা সৃষ্টি করবে। (তিরমিজি,হাদিস : ৯৯৮; আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৩২)

শোক পালনে নিষিদ্ধ কাজ
শোক পালনের ক্ষেত্রে কিছু সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যা শোক পালনকে একটি সুশৃঙ্খল ও ইসলামি আদর্শের মধ্যে রাখে। শোক পালনের দিনে কিছু কিছু কাজ করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এক. চিত্কার,মাতম ও বুক চাপড়ানো নিষিদ্ধ। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যারা শোকে গালে চাপড়ায়, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলি যুগের মতো চিত্কার দেয়, তারা আমাদের তরিকাভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১২১৯)

দুই. ইদ্দতের সময় সাজসজ্জা করা নিষিদ্ধ। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে একজন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারের লোকেরা তার আঁঁখিযুগল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করল। তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে তার সুরমা ব্যবহারের অনুমতি প্রার্থনা করল। তিনি বললেন, সুরমা ব্যবহার করতে পারবে না। তোমাদের অনেকেই (জাহিলি যুগে) তার নিকৃষ্ট কাপড় বা নিকৃষ্ট ঘরে অবস্থান করত। যখন এক বছর অতিক্রান্ত হত আর কোন কুকুর সে দিকে যেত তখন সে বিষ্ঠা নিক্ষেপ করত। কাজেই চার মাস ১০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত সুরমা বাবহার করতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৩৮)

তিন. প্রচলিত নিয়মে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াতের আয়োজন করা। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই এটিকে নিষিদ্ধ ও মন্দ কাজ গণ্য করা হত। জাবির (রা.) বলেন, আমরা মৃতের দাফন কার্য শেষ হওয়ার পর তার বাড়িতে একত্রিত হওয়া এবং (আগতদের জন্য) খাবারের আয়োজন করাকে নিয়াহা (নিষিদ্ধ পন্থায় শোক পালন) এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতাম। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৯০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬১২)

শোক প্রকাশ করার সময় সংযম ও ধৈর্য বজায় রেখে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা মুমিনদের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে সকলের সতর্ক হওয়া উচিত।

লেখক : খতিব ও মাদ্রাসা শিক্ষক
রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।

সর্বশেষ সংবাদ

ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীমুখী জনস্রোত, কর্মস্থলে ফেরা শুরু

ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। ঈদের তৃতীয় দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সীমিত...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ