মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতি নিয়ে আবারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় আসার পর কথার সঙ্গে কাজের মিল দেখাচ্ছেন তিনি। অবৈধ অভিবাসীদের বিতারিত করতে ঝড়ের গতিতে একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন।
এই অভিবাসন নীতিতে ছাড় পাচ্ছেন না কেউই। এর মধ্যে নিরপরাধ অভিবাসী থেকে সেনা সদস্যের স্ত্রীও রয়েছেন।
২২৭ বছর আগের আইন এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট প্রয়োগ করে কোনো ধরনের বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই অভিবাসীদের নির্বাসনের পরিকল্পনা করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, মাত্র এক মাসেই ২০ হাজারেরও বেশি অনথিভুক্ত তথা অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা শিশু অভিবাসীদের খুঁজে বের করেও নির্বাসনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ওয়াশিংটন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলার ৫ লাখ ৩০ হাজার অভিবাসীর অস্থায়ী আইনি মর্যাদা বাতিল করলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসী বিতাড়ন অভিযানে রেহাই পাচ্ছেন না কেউই। সরকারের দাবি, শুধু অপরাধীদেরই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন।
টেক্সাসের একটি চেকপয়েন্টে এক অভিবাসী দম্পতিকে আটক করেন ইমিগ্রেশন এজেন্টরা। তাদের ১০ বছর বয়সী কন্যা ক্যানসারে আক্রান্ত, তারা হিউস্টনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন।
পরবর্তীতে পরিবারটিকে নির্বাসিত করা হয়, ফলে তাদের পাঁচ সন্তান—যারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক—পিতামাতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
২৬ বছর বয়সী ভেনিজুয়েলার নরসুন্দর ফ্রাঙ্কো কারাবায়ো ২০২৩ সালে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে ডালাসের আইসিই অফিসে তিনি নিয়মিত অ্যাপয়েন্টমেন্টে গেলে তাকে সেখানেই আটক করা হয়।
আইসিই কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, কারাবায়ো কোনো অপরাধ করেননি। তবে শরীরে থাকা উল্কির জন্য তাকে ট্রেন দে আরাগুয়া গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে সন্দেহ করা হয়। ‘তার হাতে শুধু দুটি উলকি আছে—একটি ঘড়ি, যেখানে ওর প্রথম সন্তানের জন্মের সময় লেখা এবং আরেকটি একটি গোলাপের চিহ্ন,’ বলেন তার স্ত্রী।
৩৫ বছর বয়সী উলকি শিল্পী জোন চাসিন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে পৌঁছে নিজেই অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসন তাকেও এল সালভাদরে পাঠিয়ে দেয়, কোনো অপরাধের প্রমাণ ছাড়াই, জানান তার বোন ইউলিয়ানা।
হানিমুন শেষে উইসকনসিনে ফিরছিলেন ২৬ বছর বয়সী পেরুর নাগরিক ক্যামিলা মুনোজ। তাকে পুয়ের্তো রিকোর একটি বিমানবন্দরে আটক করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে তার অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্রের নবায়ন প্রক্রিয়াধীন ছিল।
মুনোজের স্বামী ব্র্যাডলি বার্টেল গত নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি পুরোপুরি হতবাক। আমি বলবো না যে, ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া নিয়ে আমার আফসোস আছে, তবে আমি চাই তিনি বিচারব্যবস্থাকে ঠিক করুন।
অভিবাসন আইনজীবী ডেভিড রোজাস বলেন, এটি আমার ২১ বছরের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে ভয়ংকর অভিযান। মানুষ প্রতারিত বোধ করছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অভিবাসীরা এই দেশের মেরুদণ্ড। এভাবে চলতে থাকলে আমরা শ্রমিক সংকটে পড়বো।
২৭ বছর বয়সী এক হন্ডুরান অভিবাসী শার্লি গুয়ার্দাদোকে কর্মস্থলে থাকাকালে আটক করা হয়। তার স্বামী আইস্যাক কোরেয়া একজন মার্কিন সেনা সদস্য।
গুয়ার্দাদো ১০ বছর আগে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলেও বর্তমানে তিনি বৈধতার জন্য প্রয়োজনীয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন রেখেছিলেন।
কোরেয়া বলেন, আমার ছেলের বয়স মাত্র ১০ মাস, মাকে ছাড়া সে ঘুমাতে পারছে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আমার স্ত্রী যদি নির্বাসিত হয়, তাহলে তাকে ফিরিয়ে আনতে তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যাবে।
এছাড়া আমেরিকা বসবাস করা শরণার্থীদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ট্রাম্পের উদ্যোগে ক্ষুব্ধ লাখ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশী। আমেরিকা জন্ম নেওয়া সন্তানদের মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়েও চিন্তিত তারা।
এদিকে, ট্রাম্পের অভিবাসন আদেশগুলো নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আসছে অভিবাসন বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।