বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লিউডমিলা সর্দার যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার স্বাস্থ্যসেবা ও কমিউনিটি সেবায় তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে এ সম্মান প্রদান করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন মার্কিন নাগরিক, যার পারিবারিক শেকড় বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও জনসেবার ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহিদ এফ সর্দার সাদী-এর স্ত্রী।
নারী ইতিহাস মাস উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে মার্কিন কংগ্রেসম্যান ড্যারেন সোটো তাঁকে এ সম্মানে ভূষিত করেন। ডা. লিউডমিলাসহ মোট ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যাঁরা স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা, প্রকৌশল ও সামরিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ও কৃতিত্ব এখন স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসনাল রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা তাঁদের অবদানের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি বহন করবে।
অনুষ্ঠানে কংগ্রেসম্যান সোটো বলেন, “আপনার জীবনগাথা আমাদের অভিন্ন আমেরিকান ইতিহাসের অংশ।”
ডা. লিউডমিলা সর্দার বর্তমানে ল্যাকল্যান্ড রিজিওনাল হেলথ-এ অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ করে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ক্যান্সার চিকিৎসার আর্থিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে তাঁর প্রচেষ্টা বহু মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে।
এছাড়াও, তিনি অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে একাধিক উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওসিওলা ক্যান্সার সেন্টার ও কিসিমি মহিলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন, যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।
তিনি জনপ্রিয় বই “ ইন্টার্ন মেসট্রি: এ রোডম্যাপ ফ্রম মেড স্কুল টু পিজিওয়াই-১ ইন্টারনাল মেডিসিন এক্সিলেন্স”-এর সহ-লেখক, যা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গাইড।
ডা. লিউডমিলা সর্দার আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস-এর সদস্য এবং এসিপি-এর শিক্ষার্থীদের গবেষণা উপস্থাপনার বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি হোলিস ক্যান্সার সেন্টার প্রমিজ রান ও ডিজনি ম্যারাথনস-এর মতো বড় ইভেন্টে স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
একজন কৃতী চিকিৎসক ও গবেষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি দুই সন্তানের মা এবং একজন পরিপূর্ণ গৃহিণী, যিনি কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবন দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন।
সম্মাননা পাওয়ার পর ডা. লিউডমিলা সর্দার বলেন, “এই স্বীকৃতি শুধু আমার একার নয়, বরং তাদেরও যারা জনসেবায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নারী ইতিহাস মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নারীদের শক্তি, সহনশীলতা ও সমাজে তাঁদের অবদান।”
কংগ্রেসম্যান সোটো তাঁর প্রশংসা করে বলেন, “সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আপনার অবদান অনন্য। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ এবং স্বেচ্ছাসেবী কাজের জন্য আপনাকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে সম্মান জানাই।”
ডা. লিউডমিলা সর্দার জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনসহ বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস কর্তৃক এ স্বীকৃতি শুধু ডা. সর্দারের ব্যক্তিগত অর্জনই নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশি আমেরিকানদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকারও প্রতিফলন।