spot_img

ইতিকাফের তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও বিধান

অবশ্যই পরুন

ইতিকাফ এমন এক মহত্ ইবাদত, যেখানে বান্দা দুনিয়ার সকল বন্ধন ছিন্ন করে কেবলমাত্র আল্লাহর হয়ে যায়। বিশেষত, রমজানের শেষ দশকে এই ইবাদত পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লামা ইবনুল মুনজির (রহ.) বলেন, সকল আলেম একমত যে ইতিকাফ সুন্নত; ফরজ নয়। তবে কেউ যদি মানত করে নিজের ওপর ওয়াজিব করে নেয় তবে তা ওয়াজিব হয়ে যায়। (আল-ইজমা, পৃষ্ঠা: ৫৩)

ইতিকাফের আভিধানিক অর্থ হলো অবস্থান করা। পারিভাষিক অর্থ হলো, যে ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করে এবং ইবাদতে লিপ্ত হয় তাকে বলা হয় ‘আকিফ’ এবং ‘মুতাকিফ’ (ইতিকাফকারী)। (লিসানুল আরব, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা: ২৫৫)

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে, ইতিকাফ মানে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করা। (উমদাতুল কারি, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা: ১৪০)

আর রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি স্বতন্ত্র সুন্নত। মদিনায় হিজরত করার পর থেকে ওফাত পর্যন্ত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফের আমল মহানবী (সা.) কখনো ছেড়ে দেননি। (ফাতহুল বারি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা: ২৮৫)

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর উম্মাহাতুল মুমিনিনরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০২৬)

ইতিকাফের ফজিলত
১. ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেন, সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সব নেকি তার জন্য লেখা হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৮১)
২. অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করে আল্লাহ তার মধ্যে ও জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন; যা পূর্ব-পশ্চিমের চেয়েও বেশি দূরত্ব। (আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, হাদিস: ৭৩২৬; শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি, হাদিস: ৩৯৬৫)

লাইলাতুল কদর প্রাপ্তিতে ইতিকাফের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকেও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত: ৩)

সেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইতিকাফের মূল লক্ষ ছিল লাইলাতুল কদর পাওয়া। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন। এরপর তিনি মাঝের ১০ দিন তুর্কি কুব্বাতে (এক ধরনের ছোট তাঁবুতে) ইতিকাফ করেছেন। যে তাবুর দরজার ওপর একটি কার্পেট ঝুলানো ছিল। (বর্ণনাকারী বলেন) তিনি তাঁর হাত দিয়ে কার্পেটটিকে কুব্বার (তাঁবু) এক পাশে সরিয়ে দিলেন। এরপর তাঁর মাথা বের করে লোকদের সাথে কথা বললেন। লোকেরা তাঁর কাছে আসল। অতঃপর তিনি বলেন, আমি প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেছি—এই রাতের (লাইলাতুল কদরের) খোঁজে, এরপর মাঝের ১০ দিন ইতিকাফ করেছি। এরপর আমাকে বলা হলো, লাইলাতুল কদর শেষ দশকে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন ইতিকাফ করে। তখন লোকেরা তাঁর সঙ্গে ইতিকাফ করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬৭)

প্রকৃত অর্থে ইতিকাফের ইতিবাচক ফলাফল মানুষের জীবনে তাত্ক্ষণিকভাবে, এমনকি ইতিকাফের দিনগুলোতে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া পরবর্তী রমজান পর্যন্ত অনাগত দিনগুলোর ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। আতা আল-খুরাসানি (রহ.) বলেন, ইতিকাফকারীর উদাহরণ ওই ব্যক্তির মতো, যে নিজেকে আল্লাহর সামনে পেশ করে বলছে, হে আল্লাহ যতক্ষণ না তুমি ক্ষমা করো, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না, হে আমার রব, যতক্ষণ না তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না। (শারহুল ইবনে বাত্তাল আলাল বুখারি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৮২)

ইতিকাফের কতিপয় মাসআলা

১. ইতিকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। হাদিসে আছে, একান্ত বাধ্য না হলে মসজিদ থেকে বের হবে না। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ২১১৫)

মনে রাখবেন, ইতিকাফ মানে বান্দা সম্পূর্ণ আল্লাহর হয়ে যাওয়া। মসজিদে সঙ্গীদের সঙ্গে গল্প করা, মোবাইলে ফোনালাপ, গোসল করতে বেশি সময় লাগানো এসব ইতিকাফ পরিপন্থী কাজ। ইতিকাফে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার সবকিছুর চিন্তা থেকে মনকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেবল আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে হবে। তবেই ইতিকাফ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া মাদানিয়া শুলকবহর, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ সংবাদ

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উঠে এলো যেসব বিষয়

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। শনিবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সদস্যরা...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ