ইসলামের সংযমই সবচেয়ে বড় সংযম। ইসলাম সংযমের ধর্ম। ইসলামে সংযমের ধারণা এত বিস্তৃত যে, এই ফরজ রোজার মতো ইসলাম দুই ঈদের সময়ও আত্মসংযমের কথা বলে। যারা ইসলামের এই সংযমের ধারণা অন্তরে লালন করতে পারবে তাদেরকেই আল্লাহ পরকালে জান্নাত দ্বারা পুরস্কৃত করবেন। মুমিনের জীবনে সংযমের সূচনা হয় জন্মের পরই এবং শেষ হয় মৃত্যুর মাধ্যমে।
সাধারণত রোজার ব্যাপারে আমাদের যা দেখি তা হলো, যে ব্যক্তি মুসলমানের ঘরে জন্ম নেয় এবং শৈশবেই ঈমান গ্রহণ করে সে সাবলক হওয়ার পর রোজা শুরু করে। আর যে ব্যক্তি জন্মগত মুসলিম নয়, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে সে রোজা রাখে। রমজানের ফরজ রোজাসহ অন্যান্য রোজা সুবহে সাদিক থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত পালন করতে হয়। আর ইসলামের সর্বব্যাপী সংযম শেষ হয় জীবনসূর্য ডোবার পর। ফরজ ও নফল রোজার ইফতার করা হয় উত্তম পানীয় ও খাবার দ্বারা। মানুষ ইফতারের সময় এত সুস্বাদু ও লোভাল খাবার গ্রহণ করে যে, এসবের নাম শুনলে জিভে পানি চলে আসে। এজন্য আমি এসব পানীয় ও খাবার দ্বারা ইফতার করি না, আমি ইফতার করি জমজমের পানি দিয়ে, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে, খেজুর ইত্যাদি দিয়ে। প্রশ্ন হলো, জীবনব্যাপী রোজা বা সংযমের সমাপ্তি কি দিয়ে হবে? মুমিনের জীবনব্যাপী রোজা ও সংযমের সমাপ্তি আল্লাহর প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পানপাত্র দ্বারা। যখন তিনি পবিত্র কাউসার থেকে পানপাত্র পূর্ণ করে মুমিনের হাতে তুলে দেবেন। শর্ত হলো, তাঁর রোজা যথাযথভাবে হতে হবে। সংযমের সব শর্ত পূরণ করতে হবে।
জীবনব্যাপী সংযম কবুল হওয়ার একটি নিদর্শন হলো মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হওয়া। আল্লাহর অনুগ্রহ হলে কেবল মৃত্যুর সময় ব্যক্তির কালেমা নসিব হয়। প্রশ্ন হলো, আল্লাহ কালেমার সঙ্গে মৃত্যু কাকে দান করেন? উত্তর হলো, যার মুখে সর্বদা কালেমা উচ্চারিত হয়, যার অন্তরে ঈমানের জ্যোতি থাকে, যার মন-মস্তিষ্কে আল্লাহর সাক্ষাত্ লাভের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত থাকে। সুন্দর মৃত্যুর মাধ্যমে মুমিনের জীবনের সংযম-সাধনা শেষ হয়। এই সংযমের পর বান্দা যখন আল্লাহর কাছে পৌঁছায় তখন আল্লাহ কি চমত্কার আপ্যায়নই না তাকে করেন! এমন আপ্যায়ন আর ইফতার পেতে মুমিনের উচিত জীবন উত্সর্গ করা। আল্লাহর লাখো কোটি বান্দা এমন আপ্যায়নের জন্য তাদের পুরো জীবন ব্যয় করেন। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাক্ষাত্ লাভের চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে। সত্যিই সেদিন যখন আসবে, তখন আমাদের চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না।
তামিরে হায়াত থেকে আলেমা হাবিবা আক্তারের ভাষান্তর