ইসলাম শুধু মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেনি, বরং ইসলাম সকল জীবনের অধিকার নিশ্চিত করেছে। বিশেষত যেসব প্রাণী স্তন্যপায়ী এবং যাদের দুগ্ধপোষ্য ছানা, বাছুর বা বাচ্চা আছে তাদের ব্যাপারে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে।
দুগ্ধপোষ্য প্রাণীর অধিকার
ইসলাম দুগ্ধজাত ও স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলোকে প্রয়োজনীয় সব অধিকার দিয়েছে। যেমন—
১. মা থেকে বাচ্চাকে পৃথক না করা : যে প্রাণী দুধ দেয়, যা স্তন্যপায়ী এবং যার ছোট বাচ্চা আছে, বিনা প্রয়োজনে এমন মা প্রাণী ও বাচ্চাকে পৃথক করা ঠিক নয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে তা পৃথক করা যাবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) পশু-পাখির মা থেকে বাচ্চাকে পৃথক করতে নিষেধ করেছেন। আবদুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহর (সা.) সফর সঙ্গী ছিলাম। তিনি তাঁর প্রয়োজনে অন্যত্র গেলেন। আমরা দুটি বাচ্চাসহ একটি পাখি দেখতে পেয়ে বাচ্চা দুটোকে ধরে নিলাম। মা পাখিটা সাথে সাথে এলো এবং পাখা ঝাঁপটিয়ে বাচ্চার জন্য অস্থিরতা প্রকাশ করতে লাগল। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফিরে এসে বললেন, কে এর বাচ্চা নিয়ে এসে একে অস্থিরতায় ফেলেছে? বাচ্চাগুলো এদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৬৭৫)
২. বাচ্চাকে দুধ খেতে দেওয়া : নৈতিকতার দাবি হলো, স্তন্যপায়ী ছোট বাচ্চার জন্য দুধ রেখে তারপর দুধ দোহন করা। তবে বাচ্চাকে না দেখিয়ে ওলানের পুরো দুধ দোহন করা জায়েজ। সে ক্ষেত্রে বাচ্চার জন্য পৃথক খাবারের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি তখন বকরির দুধ দোহন করছিল। তিনি তাকে বললেন, হে অমুক! তুমি যখন দুধ দোহন করো, তখন তার বাচ্চার জন্য অবশিষ্ট রেখো। কেননা বকরি সৎপ্রাণীদের অন্যতম। (তাবারানি, হাদিস : ১৪৭০২)
৪. ধীরে ধীরে দুধ ছাড়ানো : স্তন্যপায়ী প্রাণীর বাচ্চাগুলো যতক্ষণ অন্য খাবার গ্রহণ করার উপযোগী না হবে ততক্ষণ তাকে দুধ খেতে দেওয়া উচিত। যখন অন্য খাবার গ্রহণ শুরু করবে তখন ধীরে ধীরে দুধ ছাড়াতে থাকবে। এ সময় শরিয়ত কোনো নির্ধারিত পরিমাণ খাবার দেওয়া আবশ্যক করেনি। পশুর মালিক বাচ্চার প্রয়োজন অনুপাতে বাচ্চাকে দুধ খেতে দেবে। যেন তার খাবারের কষ্ট না হয়।
৫. মেশিনে দুধ দোহনে চাই সতর্কতা : মেশিন দ্বারা দুধ দোহন করলে যদি প্রাণীর কষ্ট হয় অথবা তার ক্ষতি হয় তবে মেশিন দ্বারা দুধ দোহন করা মাকরুহ। যদিও এতে প্রাণী স্বস্তিবোধ করে এবং মালিক তুলনামূলক নিরাপদে দুধ দোহন করতে পারে।
৬. ক্ষতিকর ইঞ্জেকশন না দেওয়া : পশুর দুধ বাড়াতে যেসব ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় সাধারণত তা পশুর জন্য ক্ষতিকর। এগুলো পশুর স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, পশুর দেহে প্রদাহ সৃষ্টি করে। পশু চিকিৎসকরাও এমন ইঞ্জেকশন দিতে নিষেধ করেন। তাই দুধ বাড়াতে ক্ষতিকর ও চিকিৎসক কর্তৃক অনুমোদিত নয় ইঞ্জেকশন দেওয়া জায়েজ নয়। এটা পরিহার করা আবশ্যক। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) পশুর যত্ন নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সাহাল ইবনুল হানজালিয়্যাহ (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন একটি উটের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন অনাহারে যার পেট পিঠের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি বললেন, তোমরা এসব বাকশক্তিহীন পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কোরো। সুস্থ সবল পশুর পিঠে আরোহন করবে এবং এদেরকে উত্তমরূপে আহার করাবে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৫৪৮)
৭. উপযুক্ত সময় দুধ দোহন ত্যাগ করা : যত দিন পর্যন্ত দুধ দোহন করলে পশুর কষ্ট হয় না এবং তার ক্ষতি হয় না, ততদিন পর্যন্ত মালিক দুধ দোহন করতে পারে। এরপরে দুধ দোহন করা অনুচিত। কেননা ইসলামের শিক্ষা হলো কোন বিষয়ে পশুর কষ্ট হয় এবং কোন কাজে পশু আরাম পায় তা লক্ষ্য করা। আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, আমরা কোনো স্থানে অবতরন করলে বাহনের পিঠ থেকে হাওদা নামিয়ে এর বিশ্রামের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত নামাজ আদায় করতাম না। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৫৫১)
৮. বাচ্চা দেখিয়ে দুধ দোহন করা যাবে : বাচ্চাকে দেখিয়ে দুধ দোহন করা জায়েজ। এতে শরিয়তের কোনো বাধা নেই। কেননা ইসলাম পশুর দুধের ওপর মালিকের সাধারণ অধিকার দিয়েছেন। এছাড়াও মানুষের প্রয়োজন ও অধিকার পশুর অধিকারের চেয়ে অগ্রগামী।
আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং জীবনের সর্বত্র দ্বিন মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।