spot_img

মৃত্যুই জীবনের অনিবার্য সত্য

অবশ্যই পরুন

ইতর বা ভদ্র প্রাণি অথবা ধার্মিক ও বিধর্মী কেউই মৃতু্য সীমার বাইরে নেই। কেউ চাইলে মহান আল্লাহর সব হুকুম ও শক্তিকে অস্বীকার করতে পারে কিন্তু তাকেও মৃতু্যরকূলে জীবনের তরী ভেড়াতেই হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যে মৃতু্য হতে পালাতে চাও, তোমাদের সেই মৃতু্যর সামনে যেতেই হবে।’ (সুরা জুমআ, আয়াত: ০৮)

জীবন চলার বাঁকে মোড়ে সুখ-দূঃখের অভিজ্ঞতায় সম্মৃদ্ধ মানুষ ব্যধি ও জড়াগ্রস্থ হয়ে মৃতু্যর পথে এগিয়ে যায় ও যাচ্ছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি দূর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন; তারপর দূর্বলতার পর শক্তি দেন, আবার শক্তির পর দেন দূর্বলতা ও বার্ধযক্য…’ (সুরা রূম, আয়াত: ৫৪)। তিনি আরো বলেন, ‘যিনি মৃতু্য ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন, কে সত্কর্ম করে তা পরীক্ষা করবার জন্য।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ০২)

উত্পন্ন পণ্যের গায়ে যেমন মেয়াদ লেখা থাকে তেমনি আমাদের ভাগ্যলিপির অদৃশ্য লিখণে মরণের স্থান ও ক্ষণ লেখা থাকে অথচ তা জানার উপায় নেই। আল কোরআনের বিখ্যাত বাণী: ‘কুল্লু নাফসিন যা-য়িকাতুল মাউত’ ‘সবাইকে মৃতু্যর স্বাদ আস্বাদন করতেই হবে’। (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৮৫)

মরণের জন্য স্থান কাল ব্যস্ততা-বাস্তবতা, বয়সের পরিসংখ্যান বা গড়আয়ু তত্ত্ব সবই মিথ্যা ও অনিত্য। মহান আল্লাহর কঠোর সতর্কবাণী ‘তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, পরে শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর জমাট রক্ত থেকে, তারপর তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করেন, তারপর হও যেৌবনপ্রাপ্ত, তারপর উপনীত হও বার্ধযক্যে। তোমাদের কারো বা আগেই মৃতু্য হয়ে যায়। আর এজন্য যে, তোমরা যাতে নির্দষ্টিকাল প্রাপ্ত হও, যাতে তোমরা অনুধাবণ করতে পারো; তিনিই জীবন দান করেন ও মৃতু্য ঘটান।’ (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬৭-৬৮)

কারো সাধ্য নেই মৃতু্যকে ঠেকিয়ে দেওয়ার। সব দোয়া ও দাওয়াই ব্যর্থ করে মৃতু্য মহাপ্রভুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন কারো প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত (ওষ্ঠাগত) হয়, আর সে সময় তোমরা তা তাকিয়ে দেখো, অথচ তখন আমি তোমাদের সবার চেয়েও তার কাছে থাকলেও তোমরা তা দেখতে পাও না।’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত: ৮৩-৮৫)

মহাপ্রভুর মহাশক্তিময় আদেশ মৃতু্য। তিনিই বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেনো, মৃতু্য তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুরক্ষিত-সুদৃঢ় দূর্গে অবস্থান করলেও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৭৮)
‘তাফসির ইবনু কাসির’সহ অন্যান্য প্রামাণ্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, আদিপিতা আদম (আ.) তথা মানুষের রূহ সংযুক্তি শুরু হয় মাথা থেকে এবং ক্রমশ তা পায়ের দিকে বিস্তৃত হয়। এজন্যই মৃতু্যলক্ষণ হিসেবে প্রথমে হাত-পা শীতল ও অচল-অবশ হতে থাকে। ‘ক্লিনিক্যালি ডেথ’ হলেও মাথা কিছুটা গরম থাকে, হূদস্পন্দন সামান্য থাকে তখনো।

বৈজ্ঞানিক বিশে্লষণে আছে, যেখানে ব্যক্তিকে ক্লিনিকালি ডেথ ঘোষণা করা হয়েছিলো কিন্তু ব্যক্তি বেঁচে ওঠেছেন। সেসব ব্যক্তিকে যখন তাদের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা দাবি করেন- তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তার জন্য যথষ্টে শব্দ নেই।

সাধারণ ধারণা, মৃতু্যর আগে নাক ঢলে পড়ে, আটকপাল ভেঙ্গে যায়, শিরার গতি অনিয়মিত অথবা দ্রুত ও দীর্ঘ হয়। তবে এগুলোও আপেক্ষিক। বরং কেউবা হাসতে হাসতে অথবা সিজদারত অবস্থায় মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন। আমাদের বিশ্বাস জীবন একটাই এবং এ জীবনের অবসানে আমরা মহান আল্লাহর দরবারে হিসাবের সম্মুখীন হবো।

বর্ণিত আছে, আজরাঈল (আ.) ‘জান কবজ’ করবার আগেই মানুষের জন্য নিয়োজিত ফেরেশতারা একে একে দায়িত্ব শেষ হওয়ার ঘোষণা দেন। একজন ফেরেশতা বলতে থাকেন ‘দুনিয়ার বুকে একটি দানাও বাকী নেই-যা সে খেতে পারে’। আরেকজন বলেন ‘এক ফোঁটা পানিও আর বাকী নেই-যা সে পান করবে’। আরেকজন বলেন ‘একটি শ্বাসও আর বাকী নেই- যা সে গ্রহণ করবে’! আরেকজন বলেন ‘দুনিয়ার বুকে এমন একটি জায়গাও নেই যাতে সে সামান্য সময় অবস্থান করবে…! একজন মানুষের জীবন খাতার সব হিসাব যখন শেষ হয়ে যায়, তখনই তার জন্য খুলে যায় মৃতু্যর দরজা এবং চলে যান ‘না ফেরার দেশে’-
‘এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনি ঠিক রবে
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে…’!

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

সর্বশেষ সংবাদ

নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসকে আমন্ত্রণ

অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে তরুণদের...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ