সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘জুলাইয়ে এটা বড় গণ-অভ্যুত্থান। এত শহীদ, এত আহত, ঐতিহাসিক এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছি। আমরা একটা নতুন স্বপ্ন, নতুন সময়ের পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছি। ২০২৪ সালে আমাদের জন্য একটা নতুন সুযোগ ও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র, জনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী ও আহত সবার প্রতি জাতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।’
একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
২০২৫ সালের প্রত্যাশা নিয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান বলেন, ‘২০২৫ সালে আমরা একটা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে যেতে চাই। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি। তাহলেই গণতন্ত্র স্থায়ী হবে।
আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এখন শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। এই দুটি বিষয় না হলে উন্নয়ন আর সুশাসনও আসবে না। সে জন্য আমাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য একটা জাতীয় সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক বা সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সম্পর্ক—এসব বিষয় নিয়ে তিনি বলেন,
‘আমি যা চিন্তা করছি, সেটা যদি আপনারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তুলে ধরেন, তাহলে তো আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতেই পারি। সাধারণত সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন গণমাধ্যমে কথা বলেন না। এটা অনেক আগের রেওয়াজ। বহুদিন থেকেই এই পরিবেশ গড়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে থেকে অতীত থেকে আমরা মিডিয়ায় কথা বলার বিষয়ে দ্বিধান্বিত থাকি। তারপরও এখন দেশ একটা বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের মনে জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে। থাকতে পারে বিভ্রান্তি। আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিস ইনফরমেশন, ডিস-ইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে। সে জন্য আমাদেরও মাঝে মাঝে মিডিয়ার সামনে যেতে হচ্ছে। দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা।’
প্রধান উপদেষ্টা সাধারণ নির্বাচনের একটা সময়সীমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা দিয়েছেন। সেটা ঠিক সময়। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনের রূপরেখা বাস্তবায়নে সব সহযোগিতা করব।’
সেনাবাহিনী সরকারের অংশ। বর্তমান অবস্থায় আপনাদের মধ্যে কোনো উৎকণ্ঠা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘আমাদের মাঠে থাকতে হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। আমরা কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারি, তা নিয়ে একটা ধারণা দিই। দিনের শেষে আমার সেনাদেরই তো মাঠে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যেই প্রায় পাঁচ মাস ধরে তাঁরা মাঠে আছেন। যত বেশি আমাদের লোকজন মাঠে থাকবেন, তত বেশি তাঁদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। ডাকাত ধরতে গিয়ে আমার একজন কর্মকর্তা নিহত হলেন। পুলিশ যদি দ্রুত সংগঠিত হয়ে যেত, আমার কোনো উদ্বেগ থাকত না। তারা যদি সুসংগঠিত হয়ে যায়, বেসামরিক প্রশাসন যদি যথাযথ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন শুরু করে দেয়, তাহলে আমরাও আশ্বস্ত হতে পারি।’
পুলিশ ইস্যুতে তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ পুনর্গঠিত হওয়ার জন্য কাজ চলমান। আমরা চাইব শিগগিরই সেটা ফলপ্রসূ হবে।’
গত ১৫ বছরে প্রশাসন, পুলিশ, বিচার ও ব্যবসাসহ রাষ্ট্রের নানা ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। এটাকে একটা স্বাভাবিক জায়গায় আনতে তো সময় লাগবে-এ বিষয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘এটার জন্য রাজনৈতিক দল ও সরকার লাগবে। রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি ছাড়া ও রাজনৈতিক সরকার ছাড়া এটা সম্ভব নয়।’
গত পাঁচ দশকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘ঠিক আছে, অতীতে হয়নি। এখন তো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ কাজগুলো করতে পারি।’
রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের প্রতিশ্রুতি অতীতেও দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তারা কথা রাখেনি, এমন প্রশ্নে জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘এখন তো আমরা সবাই রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যুক্ত আছি। তারা এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এই সংস্কার সবার জন্য দরকার। সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি সামনে আসছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা দরকার।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘আমি সংবিধান বিশেষজ্ঞও নই। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই বুঝেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রসঙ্গটি নিয়ে ভাবছি। কীভাবে সেটা হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা বললেই ভালো। কিন্তু এই পরিবর্তন আনতে পারলে শাসনব্যবস্থায় একটা ভারসাম্য আসবে।’
এ বিষয়ে সংবিধান সংস্কার বা অন্য কোনো কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘না, তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে একজনের সঙ্গে কিছু আলোচনা হয়েছিল। সেটা বেশ আগে।’
সেনাবাহিনী ক্ষমাত নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলার দেখভাল করছি। কিন্তু আমাদের ১/১১–এর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সেনা সদস্যদের মাঠে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও সংখ্যাটা খুবই কম। শৃঙ্খলাজনিত ঘটনার জন্য আমরা সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শেষে শাস্তিও দিই। এরপরও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমাদের তো এ ধরনের কাজে যুক্ততা কিংবা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য তৈরি করা হয়নি।
আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করছি। তারা আমাদের কাছ থেকে যে ধরনের সহায়তা চাইছে, সেভাবেই সহায়তা দিচ্ছি এবং দেব। যে দিন অন্তর্বর্তী সরকার বলবে, ‘আপনাদের অনেক ধন্যবাদ, আপনারা আপনাদের কাজটা সম্পন্ন করেছেন, এখন পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব নেবে।’ আমরা তখন সানন্দে সেনানিবাসে ফিরে যাব।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাহায্যের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব। এটাতে যদি আমাদের অসুবিধা হয়, সৈনিকদের যদি সাময়িক অসুবিধাও হয়, তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করে যাব। দেশ ও জাতির স্বার্থেই আমরা এটা করব। এই জাতির জন্য, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা তৈরি আছি।’
অনেকে বলেন অতীতেও অনেক লড়াই বা আন্দোলনের পরও সংস্কার বা পরিবর্তন করা যায়নি। আপনিও কি এবারের পরিস্থিতিকে শেষ সুযোগ হিসেবে দেখেন-এমন প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি এটাকে শেষ সুযোগ বলব না। আমি এটাকে সুযোগ হিসেবে বলতে চাই। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগানো উচিত। এটা সবার জন্য ভালো। একটা সুশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্যে সবকিছু যদি ঠিক হয়ে যায়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে অনেকেই তো এই পরিবর্তনের সুফল ভোগ করবেন। রাজনীতিতে বিরোধী দল বিরাট এক সহায়ক শক্তি। সরকার এবং বিরোধী দল একে অন্যের পরিপূরক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এমন প্রক্রিয়া থাকলে একে অন্যের ভুল ধরিয়ে দিতে পারে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে। সবাই তাদের পরিধির মাঝে থেকে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন। এটা তো একটা দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন।’
সংস্কারের নিয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমি আশাবাদী। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ভালো রাজনীতিবিদ রয়েছেন। হয়তো ভিন্নমতের মানুষও আছেন। আমার অতীত অভিজ্ঞতায় বলে, যখন এমন একটা ক্রান্তিকাল আসে, আমাদের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বসলে তাঁরা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন।’
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে কী হবে? এমন শঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সেনাপ্রধানকে। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কোনো শঙ্কা দেখি না। এখন সমঝোতা সম্ভব। একসঙ্গে বসে এটা করা সম্ভব। এটা একটা সংস্কৃতির ব্যাপারও বটে। সবার এটা বোঝা উচিত। আমি নৈরাশ্যবাদী নই। সব সময় আমি আশাবাদী।’
শ্রমিক অসন্তোষ, নানা ক্ষেত্রে ধর্মঘট বা বিশৃঙ্খলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা তুলনামূলকভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছি সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যতটা হতাশ মনে হচ্ছে কাউকে কাউকে, এতটা হতাশ আমি না। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তো একটা সামগ্রিক ব্যাপার। এখানে পুলিশের ভূমিকা রয়েছে, প্রশাসনের আছে, সরকারের ভূমিকা আছে। সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ জনগণেরও তো ভূমিকা রয়েছে। সবার সামগ্রিক প্রয়াসের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এটা আমাদের সবাইকে সব সময় মনে রাখতে হবে। আমরা একজনের ঘাড়ের ওপর দোষ চাপিয়ে বলি সরকার, বলি পুলিশ বা বলি সেনাবাহিনী দায়ী, এটা করা যাবে না। এখানে তো সবার একটা ভূমিকা আছে।’
‘মব জাস্টিস’ নিয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এটা এক ধরনের অসুস্থতা। কেউ যদি পিটিয়ে মেরে ফেলাতে, বিচারবহির্ভূত হত্যায় সমাধান দেখেন, এটা ভুল। এটা বন্ধ করতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিএফআই একটি স্বতন্ত্র সংস্থা। সেনাবাহিনী এ রকম কিছুতে যেতে চায় না, জড়িত হতে চায় না। আমরা এমন কিছু করব না, যাতে সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নানা ইস্যুতে সেনাপ্রধান বলেন, ‘ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা অনেক দিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আবার ভারতও আমাদের কাছ থেকে সুবিধাও পাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক আর অনানুষ্ঠানিক মিলিয়ে ওদের প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে কাজ করছে। এ দেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক পণ্য কিনছি। কাজেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে ভারতের বিরাট স্বার্থ আছে। এটা একটা দেওয়া–নেওয়ার সম্পর্ক। ন্যায্যতার ভিত্তিতে হতে হবে এটা। যেকোনো দেশ সব সময় অন্য দেশ থেকে সুবিধা পেতে চাইবে। এটা তো দোষ না। আমি যদি আদায় করে নিতে না পারি, দোষ তো আমারও। এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। জনগণ যেন কোনোভাবেই মনে না করে ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা এমন কিছু করছে, যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। কোনোভাবেই মানুষ যেন এটা না ভাবে।’
‘ভারতের কাছে প্রধান বিষয় হচ্ছে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা। বিগত সরকারের কাছ থেকে এ ক্ষেত্রে তারা সহায়তা পেয়েছে।’ এই ইস্যুতে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘দেখুন, আমার কথা হচ্ছে আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে আমি এমন কিছু করব না, যেটা তাদের কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী হয়। একই সঙ্গে আমার দিক থেকে প্রত্যাশা থাকবে যে প্রতিবেশীও আমার সঙ্গে এমন কিছু করবে না, যা আমার স্বার্থের পরিপন্থী। আমি যখন তাদের স্বার্থ দেখব, তারাও আমার স্বার্থটা সমান গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে না। স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে না মিয়ানমার সীমান্তেও। সীমান্তে আমাদের লোকজনকে হত্যা করবে না। আমরা ন্যায্য হিস্যার পানি পাব। এতে তো কোনো অসুবিধা নেই। সম্পর্কটা ন্যায্যতার ভিত্তিতে হোক।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর অবশ্যই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টি সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। অতীতে এগুলো হয়েছে। আমরা অতীত থেকে শিখেছি। এটা কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনি।’
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়…আমাদের এই পররাষ্ট্রনীতি চমৎকার। আমাদের ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যেতে হবে। চীন আমাদের উন্নয়নের অংশীদার। বাংলাদেশে তাদের অনেক বিনিয়োগ আছে। কাজেই চীন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের অনেক সমরাস্ত্র আমরা ব্যবহার করছি। বিমানবাহিনী ব্যবহার করছে। নৌবাহিনী ব্যবহার করছে। তাদের সমরাস্ত্র তুলনামূলকভাবে সস্তা।’
যুক্তরাষ্ট্রও তো ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বড় শক্তি। তাদের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমরা এটা বজায় রেখে চলব। বর্তমানে জটিল ও কঠিন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই মুহূর্তে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলো আমরা যেন সীমিত রাখি। সরকারকে বিরক্ত না করি। তাহলে সেটা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্য করবে। ধৈর্য ধারণ করি।’