ইসরাইল ও সিরিয়ার মধ্যকার বাফার জোন থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরাইল। সিরীয় সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহে ইসরাইলি সৈন্যরা ওই বাফার জোন দখল করে নেয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতোনিয়াহু বলছেন, তারা আপাতত সেখানেই থাকবে।
বাইডেন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভানের সাথে জেরুসালেমে এক বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর দফতর জানিয়েছে যে গোলান উপত্যকার পাশের বাফার জোনে ইসরাইলি সৈন্যরা ততদিন থাকবে, যতদিন না সিরিয়ার দিকের কোন বাহিনী ইসরাইলিদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করছে।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী ও ইসরাইলের মধ্যে ১৯৭৪ সালে হস্তক্ষেপ না করার চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য জাতিসঙ্ঘ, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে। তবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলছে, এই পদক্ষেপ সাময়িক।
ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আশঙ্কা করছেন যে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ উৎখাত হবার পর বাফার জোন থেকে সিরীয় সৈন্য্যরা পালিয়ে যাওয়ায় একটা শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। নেতানিয়াহুর দফতর বলছে, সেই উগ্রবাদী গোষ্ঠীদের দিয়ে সেই শূন্যতা পুরণ করতে এবং ৭ অক্টোবরের আক্রমণের মতো গোলান উপত্যকায় ইসরাইলিদের হুমকি দিতে ইসরাইল দিবে না।
এই বিবৃতিতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাসের হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয় যে হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরাইলিকে হত্যা করা হয় এবং ২৫০ জনকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়, যাদের মধ্যে ১০০ জনকে, জীবিত কিংবা মৃত, এখনো তারা মুক্তি দেয়নি।
ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী ব্যুরোর সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (রিজার্ভ) নিতজান নুরেইল বলেন, সিরিয়ার ঘটনাগুলোর দিকে ইসরাইল খুব সতর্কতার সঙ্গেই নজর রাখছে।
নুরেইল বলেন, ‘সিরিয়ার জন্য সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে, তা হলো, সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের সোমালিয়া হয়ে উঠবে, যার অর্থ হচ্ছে, অনেক সংগঠনই পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে।’ আগামী কয়েক বছর সিরিয়াকে কেউ ‘স্থিতিশীলতা’ নামে ডাকবে না।
সিরিয়ার অস্ত্রভাণ্ডারে ইসরাইল শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে এবং ট্যাংক ও অন্যান্য অস্ত্র আটক করেছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা মনে করেন যে ইসরাইল সিরিয়ার আক্রমণাত্মক সকল সক্ষমতাকে বিনষ্ট করে দিয়েছে।
উচ্চপদস্থ সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আলভি মেলামেদ বলেন, সিরিয়ায় যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আসাদকে ক্ষমতাচ্যূত করেছে তাদের দিকে ইসরাইল নজর রাখছে। তিনি বলেন, বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি মনে হচ্ছে দামেস্কের ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
তবে মেলামেদ বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে জোলানি হায়াত তাহরির আল-শামের নেতা আর এ গোষ্ঠীটিকে বাইডেন প্রশাসন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে বলছে, এরা আল ক্বায়দার সাথে সম্পৃক্ত।
মেলামেদ বলেন, ‘তিনি আল কায়েদা থেকে এসেছেন। তিনি ইরাক ও সিরিয়ায় অভিযান চালাতেন।’
তবে মেলামেদ বলেন যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জোলানি আল কায়েদার সাথে এখন আর সম্পৃক্ত নন। মনে হচ্ছে, তার অবস্থান এখন অনেকটাই নমনীয়।
সূত্র : ভিওএ