সাহারা মরুভূমিতে ২০১১ সালে মঙ্গল গ্রহের একটি উল্কাপিণ্ড আবিষ্কৃত হয়েছিল যা ‘ব্ল্যাক বিউটি’ নামে পরিচিত। নতুন গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, উল্কাপিণ্ডটি মঙ্গলে ৪.৪৫ বিলিয়ন বছর পুরনো পানির উপস্থিতির প্রমাণ দিয়েছে। এই আবিষ্কার মঙ্গলের প্রাচীন পরিবেশে জীবনের সম্ভাব্যতা থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এই তথ্য।
‘ব্ল্যাক বিউটি’ নামের উল্কাপিণ্ডের একটি জিরকন খনিজ দানা বিশ্লেষণে প্রমাণ পাওয়া গেছে, মঙ্গল গ্রহে প্রাণধারী হট স্প্রিং বা হাইড্রোথার্মাল সিস্টেমের মতো জলীয় পরিবেশ থাকতে পারে। জিরকন খনিজটি মঙ্গলের প্রাচীন ভূত্বকে জলীয় ক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়, যা পৃথিবীতে জীবনের উদ্ভবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিবেশের অনুরূপ।
গত ২২ নভেম্বর বিজ্ঞান জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দেখা যায়, গ্রহটি তৈরি হওয়ার মাত্র ১০০ মিলিয়ন বছর পরে পানি উপস্থিত ছিল। সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ লোজানের গবেষক জ্যাক গিলেসপি বলেন, “উল্কাপিণ্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে মঙ্গলের ভূত্বকে পানি পৃথিবীর মতো একই সময়ে উপস্থিত ছিল। এবং সেখানে জীবনের সম্ভাবনা ছিল।”
‘ব্ল্যাক বিউটি’ মেটিওরাইট মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন বছর আগে এক মহাজাগতিক সংঘর্ষের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীতে পড়ে। এটি মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ টুকরোগুলোর মধ্যে একটি।
জিরকন সাধারণত অলংকার এবং চিকিৎসা উপকরণ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, তাছাড়া এটি সময় নির্ধারণে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করে। এই খনিজটি ইউরেনিয়াম এবং সীসার অনুপাত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার গঠনের সময়কাল জানাতে পারে।
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, ‘ব্ল্যাক বিউটি’র জিরকনে উচ্চমাত্রার লোহা, সোডিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এটি নির্দেশ করে যে, জিরকন গঠনের সময় পানি-সমৃদ্ধ তরলের সংস্পর্শে এসেছিল।
গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, মঙ্গলের প্রাচীন ভূত্বকে হট স্প্রিংয়ের মতো হাইড্রোথার্মাল সিস্টেম ছিল। এ ধরনের সিস্টেমে পানির তাপমাত্রা ভূগর্ভস্থ আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীতে এ ধরনের পরিবেশে প্রাথমিক জীবনের উদ্ভব ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়।
গবেষক ড. অ্যারন ক্যাভোসি বলেন,“আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাচীন মঙ্গলের ভূত্বক উষ্ণ এবং আর্দ্র ছিল। এটি ইঙ্গিত করে যে, ৪.৪৫ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলে জীবনধারণযোগ্য পরিবেশ থাকতে পারে।’
গবেষকরা আরও জোর দিয়েছেন, ভবিষ্যতে মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে সরাসরি নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে এই গবেষণার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে। বর্তমানে নাসার পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারে প্রাচীন হ্রদের প্রমাণ অনুসন্ধান করছে।