অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের নানা মত, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতিনীতি থাকবে কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। আমাদের শত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা পরস্পরের শত্রু নয়। আমাদের জাতীয়তা, পরিচয়ের প্রশ্নে একজায়গায় চলে আসি। আমরা বাংলাদেশি, এক পরিবারের সদস্য।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজকে বসলাম এ জন্য পত্র-পত্রিকা দেখে মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগেছে, সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনাদের সঙ্গে বসা। শপথ গ্রহণের পরে শুনতে শুরু করলাম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তখন মনটা খারাপ হয়ে গেল। এর পরপরই আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলাম। সেখানেও বললাম আমরা একই পরিবারের সদস্য। সব দাবি-দাওয়া বাদ দিলেও একটা দাবি পরিস্কার আমাদের সকলের সমান অধিকার, বলার অধিকার, ধর্মের অধিকার, কাজ কর্মের অধিকার। সেটা এসেছে সংবিধান থেকে। নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করা। শুনলাম এখনো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে বসলাম এটা থেকে কিভাবে উদ্ধার করা যায়।
দূর্গাপূজায় নিরাপত্তায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সেটা পুরো জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। তখন তৃপ্তি পেলাম একটুতো কাজ করেছি।
তিনি বলেন, এখন আবার নতুন কথা, হামলা হচ্ছে, অত্যাচার শুরু হচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি, কি হচ্ছে? সবদিকে দেখলাম এটা হচ্ছে না। এক খবরে বলা হচ্ছে, আরেক খবরে বলা হচ্ছে হয়নি, তথ্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। এটা ঠিক না। এটার অবসান হতে হবে। আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তা ভুল হতে পারে। তথ্যের ওপর বসে থাকার কিছুই নাই, এটার অর্থ অন্ধের মত বসে থাকা। ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে। খোঁজ নিতে হবে তথ্যের গরমিল কেন? তাতে ওরা যা বলছে তা কি মিথ্যা প্রচার? না আমরা যা বলছি তা মিথ্যা প্রচার। সত্যটা কোথায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের লক্ষ্যের কোন ফারাক নেই। সেখানে সঠিক তথ্য কিভাবে পাব, সেটা আমাদের জানার৷ প্রকৃত তথ্য, অনেক সময় সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। কর্তা যা চাই, সেভাবে বলে। আসলটা মন খুলে বলতে চায় না। আমরা আসল খবরটা জানতে চাই। সেই প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এতবড় দেশে যেকোন ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে চাই। তাৎক্ষণিক খবর পেলে যাতে সমাধান করা যায়। যেদিক থেকেই দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, প্রথম কথাটা হলো না হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। আমি যা বলছি তা দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে। আমরা এক পরিবারের মানুষ হিসেবে সামগ্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। সেখানে তথ্য ও প্রতিকার হল বড় বিষয়।
তিনি বলেন, আমি পেলাম তথ্য কিন্তু প্রতিকার পেলাম না। সমস্যা হয়ে গেলে সমাধান করতে হবে। আজকের আলোচনা খোলাখুলি, আমরা সবাই আলোচনা করবো। আমাদের লক্ষ্যে কোন গোলমাল নেই। তথ্য প্রবাহ কিভাবে পাব, দোষীকে কিভাবে ধরব। যাতে সবাই সঠিক তথ্যটা পেয়ে যায়। এমন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যার নাম দিয়েছি নতুন বাংলাদেশ। এটা আমাদের করতে হবে। আপনাদের কথা বলে সন্তুষ্ট করে আজকের মত বিদায় দিলাম তা নয়। এটা দ্রুত করতে হরবে। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দেখলে হবে না, আমাদের বর্তমানেই করতে যেতে হবে।
সংখ্যালঘু সমস্যার বিষয়ে অবাধ, সত্য তথ্য কিভাবে সংগ্রহ করা যায় সে বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কিভাবে নিরাপদে সংগ্রহ করবো, যে তথ্য দিচ্ছে সে যেন বিব্রত না করে তাও নিশ্চিত হতে হবে।