নানা গুণে ভরপুর ফল আমলকী, তাই নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে শীতকালের পরিবর্তিত আবহাওয়া ও ঠান্ডা মৌসুমে নিজেকে নানা রোগ থেকে দূরে রাখতে আমলকীর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে প্রতিদিন একটি করে আমলকী খাওয়ার রয়েছে নানা উপকারিতা। কেননা, ভেষজগুণসম্পন্ন আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া আমলকী ফল ও পাতা উভয়ই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
খাওয়ার রুচি বাড়াতে আমলকী বিশেষভাবে কার্যকরী। টকজাতীয় এ ফল এতই ভিটামিন ‘সি’ উপাদানে ভরপুর যে ছোট একটি আমলকী খেলে ভিটামিন সি-র জন্য আপনাকে অন্য আর কোনো ফল খাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
নিয়মিত আমলকী খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আসুন একে একে তা জেনে নিই–
১. শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় আমলকী। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর উপাদান সাধারণ জ্বর এবং মূত্রনালির সংক্রমণ রোধে সহায়ক।
২. ক্লান্তি, অলসতা, বমি বমি ভাব, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, মেজাজ বিগড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যায় আমলকী দারুণ কাজ করে।
৩. বতর্মান সময়ে অ্যাসিডিটির সমস্যা কমবেশি সবারই আছে। পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমলকীর জুস কার্যকরী।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ্বরোগেও দারুণ কার্যকরী আমলকী। আমলকীতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে সহজে।
৫. গর্ভাবস্থায় হাত ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া খুবই সাধারণ লক্ষণ। আমলকীতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান এ সমস্যার সমাধানে কাজ করে। পাশাপাশি আমলকীতে থাকা প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকায় এ ফল শরীরকে হাইড্রেট রাখতেও সাহায্য করে।
৬. নিয়মিত আমলকী খাওয়ার অভ্যাস রক্তচাপ ঠিক রাখে। আমলকীতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ রক্তনালি প্রসারিত করতেও সাহায্য করে, যা স্বাভাবিক রক্তচাপ ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়তে দেয় না।
৭. মাড়ি থেকে রক্ত বের হওয়া কিংবা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি দিতে পারে আমলকী। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ আমলকী দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধেও দারুণ কার্যকরী আমলকী।
৮. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আমলকী প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। তাই শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন থেকে মুক্তি পেতেও নিয়মিত খান আমলকী।
৯. আমলকীতে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান হবু মায়েদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
১০. স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও দারুণ কার্যকরী আমলকী। হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ভালো রাখার পাশাপাশি এ ফলটি দীর্ঘমেয়াদি সর্দি-কাশি দূর করতেও দারুণ কাজ করে।
১১. ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ভাব বাড়াতে কোলাজেনকে বুস্ট করার পাশাপাশি বলিরেখা, পিগমেনটেশন, পোড়া দাগ, তৈলাক্ত ভাব সহ নানা ত্বকের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী এ ফলটি। চুলকে ঘন, রেশমি ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করতেও জাদুকরী শক্তি রয়েছে আমলকীর।
সূত্র: বোল্ডস্কাই