টালিউড ইন্ডাস্ট্রির আলোচিত অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে সবসময় নজর কাড়েন দর্শকদের। ছোট কিংবা বড়পর্দা, সব মাধ্যমেই বিচরণ তার। আর অভিনয় দক্ষতা দিয়েই খ্যাতির শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছেন এ অভিনেত্রী।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রজেক্টে চেনা ইমেজ ভেঙেচুরে নতুনভাবে ধরা দিচ্ছেন অপরাজিতা। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও বেশ সক্রিয় হয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের কাজের খবরাখবর এবং ব্যক্তিজীবনের নানা বিষয় ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য সেখানে তুলে ধরেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার কারণে অনেক সময় কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয় অভিনেত্রী অপরাজিতাকে। এবার এমনই একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। যেখানে শিশুসুলভ আচরণের জন্য ‘বিশ্ব ন্যাকা, কচি খুকি’ নামে কটাক্ষ হওয়ার জবাব দিয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাত ৭টা ১১ মিনিটে ফেসবুক ভেরিফায়েড প্রোফাইলে এক স্ট্যাটাসে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অপরাজিতা।
এ অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘“দিল তো বাচ্চা হ্যাঁ জি!” বলা যতটা সহজ, নিজের অন্তরের শিশুকে বাস্তবিকভাবে লালন করে চলা কিন্তু আসলে ততটাই কঠিন। সমাজতত্ত্বে, মনস্তত্ত্বে শিশুসুলভতার মধ্যে যে পবিত্রতা, যে মমত্ব লিখিত ও প্রমাণিত সত্য, তাকে বাস্তবিকতায় আলিঙ্গন করতে গেলেই রে রে করে উঠবে চারপাশ, ঘটে যাবে অনর্থ। কথায় বলে যা কিছু তাত্ত্বিক, তা বইয়ের পাতাতেই ভালো। জীবন সাধারণ ছাপোষা নিয়মে বাঁচাই শ্রেয়, আর সেটা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যই সত্যি। এবার নারী যেহেতু সবকিছুতেই দ্বিতীয়ত, আর সেটা নিয়ে সামাজিকতায় কোনো প্রশ্ন নেই, কাজেই এ ক্ষেত্রেও যে নারীর ওপর হম্বিতম্বি একটু বেশি হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।’
‘পূর্ণবয়স্ক নারী, তিনি হতেই পারেন ব্যাংককর্মী, শিক্ষিকা, গবেষক, শিল্পী, গৃহবধূ, কিন্তু তিনি যাই হোন না কেন, তিনি যদি নিজের শিশুসুলভতার ভিত্তিতে জীবনের ইটগুলো প্রতিস্থাপন করতে চান বা করেন, তিনি হয়ে যাবেন ন্যাকা, আহ্লাদী, বেহায়া, ঢঙি ইত্যাদি ইত্যাদি। তা তখন তার নাম অপরাজিতা আঢ্য হোক বা আনোয়ারা বিবি, নিতান্ত ন্যাকা ছাড়া তাকে সমাজ আর কোনো নামেই ডাকবে না।’
তিনি লিখেছেন, ‘পরিবারের ভেতর “তুমি বড্ড ছেলেমানুষ”, “বাচ্চাদের মতো করো না” থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে “বিশ্ব ন্যাকা”, “একেবারে অসহ্য, কচি খুকি” শুনতে শুনতে অভ্যস্ত আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমার ওপর তো এত মানুষের আশীর্বাদ, আমিই যদি এত শুনি, না জানি অসাধারণভাবে সাধারণ নারীদের আরও কী কী শুনতে হয়। যা কানে নেয়ার নয়, তা না নেয়াই শ্রেয় জানি, তবু যার কাছে সেটা ছাড়া আর কোনো উপায়ই অবশিষ্ট নেই, তাদের যন্ত্রণার কথা ভাবলে শিশু দিবস আপাদমস্তক ব্যর্থ লাগে।
‘আর রইল বাকি সেসব মানুষদের কথা, যাদের বয়সে বড় হলেও মন থেকে বড় হওয়ার সৌভাগ্য দেননি ঈশ্বর, তাদের পাগল দাগিয়ে দেয়া ছাড়া কি বা করলাম আমরা। যা কিছু সংখ্যালঘুর, তাই পাগলামি বলে দাগিয়ে দেয় সমাজ। কেউ তাদের ভেতরের শিশুর দিকে তাকায় না, তাদের বাবা-মার যন্ত্রণার কথা ভাবে না। আমার মা চিরকাল বলে গেলেন, “আমার ছেলে যেন আমার সঙ্গেই চলে যায়”। দাদার মানসিক ভারসাম্য তার কাছে এতই মর্মভেদী ছিল যে, শেষদিন পর্যন্ত মানুষটাকে সমাজ যন্ত্রের কাছে মনে মনে মাথা নোয়াতে হলো। তবে আর শিশু দিবস পালন করে কী জিতে নিলাম আমরা। কী পারলাম? পাউডার ক্রিমে আবৃত ঝকঝকে শিশু মুখের দিকে তাকিয়ে আদরে ঢলে পড়লাম, পথে ঘাটে থাকা নাক দিয়ে সিকনি গড়ানো শিশুদের দিকে ঘুরেও দেখলাম না। শিশুত্বের দিকে আঙুল তুলে ন্যাকা বা পাগল বলতেও দ্বিধা বোধ করলাম না, আর শিশু দিবস টা বেমালুম চলে গেল।’
সবশেষ এ অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘এখন কেউ কেউ বলতেই পারেন, আপনিই বা কেন লিখছেন? আপনি কি করেছেন? তাদের বলি, সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই তাই লিখছি, আরও না হয় একটু বেহায়া কচি খুকি হলাম, তাতে আমার শিশুসুলভ মন কিন্তু আনন্দই পাবে। অন্তরের শিশুর চোখ দিয়ে দেখুন, নিষ্পাপ মুক্তির কামনায় আপনারও একটি বার বেঁচে নিতে ইচ্ছা করবে।’