বাংলায় একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে—‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’। অর্থাত্, একজন মানুষের আচার-ব্যবহার, চালচলন ও কথাবার্তায় বুঝা যায় সে কেমন ঘরের সন্তান। পরিবারের শিক্ষা-দীক্ষা কেমন পেয়েছে। তার আচরণ প্রশংসনীয় হলে ভালো ঘরের সন্তান ধরা হয়, আর মন্দ হলে ছোটলোক বলা হয়। তাই সামাজিকভাবে স্বভাবচরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব আছে। এর বাইরে ইসলামও মানুষকে সদাচরণ ও উত্তম গুণাবলির শিক্ষা দেয়। কোরআন ও হাদিসে এর অসংখ্য প্রমাণ আছে। মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রশংসা করে পবিত্র কোরআনে বলেন—‘নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা নুন, আয়াত : ৪)
মহানবী (সা.) ছিলেন মানবজাতির শিক্ষকস্বরূপ। তাই আমাদের উচিত নবীজির আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে উত্তম মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা।
নিজে ক্রোধ দমন করে যে ব্যক্তি ভালো ব্যবহার করে সে-ই প্রকৃত ভালো মানুষ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর (তারাই মুত্তাকি) যারা ক্রোধ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সত্কর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)
আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছেন। কারণ, রাগে-ক্ষোভে মানুষ কখনো এমন কাজ করে ফেলে, যার জন্য পরে লজ্জিত হতে হয়। রাগের মাথায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনেক সময় ভুল প্রমাণিত হয়। কখনো অন্যের ওপর জুলুমও হয়ে যায়। তাই রাগ চলে এলে মাথা ঠাণ্ডা রাখা কর্তব্য। এর সাথে সাথে আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করার ব্যাপারেও উত্সাহ দিয়েছেন। এবং এগুলোকে ভালো গুণ হিসেবে গণ্য করেছেন।
সদাচরণ ও উত্তম স্বভাব সম্পর্কে নবীজি (সা.)-এর অনেক হাদিস বর্ণিত আছে। এর প্রতি উত্সাহ দিতে গিয়ে এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির ঈমান সবচেয়ে বেশি পূর্ণ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মুমিনের আমলের পাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারি আর কিছু নেই। আর আল্লাহ তাআলা নোংরা ও অশ্লীলভাষীকে ঘৃণা করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৯)
এই হাদিসে মন্দ স্বভাবের ক্ষতিও উল্লেখ করা হয়েছে। যদি কেউ শুধু মন্দ কথাও বলে, তাকেও আল্লাহ ঘৃণা করেন। আর আল্লাহ যাকে ঘৃণা করবেন, সে পরকালে মুক্তি এবং জান্নাতে যাওয়ার আশা করবে কীভাবে?
সচ্চরিত্রের ফজিলতের ক্ষেত্রেও এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর, সে সবচেয়ে উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)
পরিশেষে, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উত্তম গুণাবলি ও সদাচরণের অধিকারী হওয়া জরুরি। মহান আল্লাহ আমাদের এই গুণ অর্জন করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম
কেওয়া, শ্রীপুর, গাজীপুর।