করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল-ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, সেশন জট, পরীক্ষা, ল্যাব ক্লাস, চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া, অর্থনৈতিক সংকট, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরিচয় সংকট তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। তাই, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল ও ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে। না হলে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলন করবে।
সোমবার (২৪ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে তারা বলেন, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন কারণে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছি। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় আমাদের মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে অশিক্ষা, অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। দীর্ঘদিন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষায় নেমে এসেছে স্থবিরতা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা। তাদের কেউ টিউশন করে, কেউবা পার্টটাইম কাজ করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে এবং অনেকে বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকায় শিক্ষার্থীরা যেমন আর্থিক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, তেমনি তাদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের অনলাইনভিত্তিক পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিলেও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপ ও ব্যয়বহুল ইন্টারনেটের কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। আবার স্কুল-কলেজের শিশুশিক্ষার্থীরা অত্যধিক অনলাইন ব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। এতে সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে।
তারা আরও বলেন, গত এক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে নানা উপায়ে প্রতারণা চলছে। করোনার ভয় দেখিয়ে ক্যাম্পাস-হল বন্ধ করে বলা হচ্ছে, ‘বাসায় থাকা নিরাপদ’। অথচ সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ সাইন্স জার্নাল ল্যানসেটের এক গবেষণায় বের হয়ে এসেছে, করোনা বাতাসে ছড়ায়। আর করোনা বাতাসে ছড়ালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ ঘরে থাকলেও সেখানে বায়ুবাহী করোনা এসে পৌঁছাতে পারে। ‘বাসায় থাকা নিরাপদ’ তা বিজ্ঞানমতে শুদ্ধ হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ এর মধ্যে। এই বয়সীদের করোনা হলে মৃত্যু ঝুঁকি নেই বললেই চলে। অথচ তাদের ঘরে বন্দি করে রাখা হচ্ছে। অপরদিকে করোনায় মধ্য ও বৃদ্ধ বয়সীদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি, অথচ তারা সর্বত্র অফিস-কারখানা-গণপরিবহনে ঘুরতে পারছেন। এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, এতদিন টিকার কথা বলে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতদিন বলা হয়েছে, ‘টিকা নিলে আর করোনা হবে না, তাই টিকা নেওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে।’ অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও অনেকের করোনা হচ্ছে। তার মানে টিকা দিলেই করোনা চলে যাবে, এমনটা নয়। তাই টিকার জন্য বছর বছর বসে থাকার কোনও মানে হয় না। বরং টিকার জন্যে অপেক্ষা করা মানে হয়রানি বৃদ্ধি এবং শিক্ষাজীবন ধ্বংস করার নামান্তর। তাই অতিদ্রুত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। না হলে দেশজুড়ে একযাগে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাবো আমরা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুল ইসলাম, সরকারি তিতুমীর কলেজের নূর মুহাম্মদ সুমন, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জি কে সাদিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাফায়েত রতন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম চৌধুরী মুন্না, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিকে সাদিক, ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মারুফা প্রীতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ নাসির, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ।