গত বৃহস্পতিবার ভারতে করোনা সংক্রমণ আরও একটি মারাত্মক দৈনিক রেকর্ড তৈরি করেছে। এই পরস্থিতিতে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন আরোপ না করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি।
অনেক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, বিরোধী নেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পরামর্শ দিয়েছেন যে, শহর ও মফস্বলগুলোতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ফলে লকডাউনই একমাত্র বিকল্প বলে মনে হচ্ছে, যখন হাসপাতালগুলো রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে এবং স্বজনরা হন্যে হয়ে অক্সিজেনের সন্ধান করছেন এবং শ্মশান ও সমাধিস্থলগুলো মৃতদেহের সৎকারে হিমশিম খাচ্ছে।
ভারতের সরকারি হিসাবে গত ১০ দিনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দৈনিক ৩ হাজারেরও বেশি দাঁড়িয়েছে। গত একমাসে ভারতের ২৮টি অঙ্গ রাজ্যের মধ্যে প্রায় এক ডজন রাজ্য গত বছরের মার্চের দেশব্যাপী লকডাউনের চেয়ে কম কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। সরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, ‘গত বছরের মতো ভারতে পুরোপুরি কঠোর লকডাউন দরকার, বিশেষত এমন অঞ্চলে যেখানে পরীক্ষিতদের মধ্যে ১০ শতাংশেরও বেশি কোভিড-১৯ সংক্রমণ রয়েছে।’
এমন এক পরিস্থিতিতে একের পর এক সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। একই সঙ্গে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও মোদির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। রাহুল মোদিকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, ‘কোভিড পরিস্থিতি সামলাতে মোদি সরকার ব্যর্থ। আর সরকারের ব্যর্থতা দেশকে অবিশ্যম্ভাবী লকডাউনে দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ রাহুলের চিঠিতে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়, ‘মোদি সরকার সময়ের আগেই করোনার বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা করে দিয়েছে। আর সেই কারণেই দেশের এই করুণ পরিস্থিতি। যে অবস্থা দেশের গোটা স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ভেঙে দিয়েছে।’
‘কোভিড সুনামি সমান তালে ধ্বংসলীলা চালানোয় আমি আপনাকে চিঠি লিখতে বাধ্য হচ্ছি।’ ঠিক এ ভাষাতেই নিজের চিঠি শুরু করেন তিনি। এরপর রাহুল গান্ধী লেখেন, ‘এ নজিরবিহীন সময়ে আপনার প্রাধান্য দেওয়া উচিত জনকল্যাণকে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ যে প্রবল কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা থামাতে আপনার সব কিছু করা উচিত। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভারতের দায়িত্বের কথা মনে রাখা উচিত।’
মোদির সমালোচনা করতে ছাড়েননি সিপিপি বৈঠকে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও। তিনি বলেন, ‘সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। মোদি সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।’ সোনিয়া বলেন, ‘দেশ এ মুহূর্তে কঠিন স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে রয়েছে। শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে, পাওয়া যাচ্ছে না জীবনদায়ী ওষুধ ও অক্সিজেন।’
সরকারি-বেসরকারী পরামর্শদাতা ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সভাপতি শ্রীননাথ রেড্ডি স্বীকার করেন যে, বিভিন্ন রাজ্য মহামারীটির তীব্রতা অনুভব করছে, তবে এখনও দেশব্যাপী সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফাউচিও পরামর্শ দিয়েছেন যে, সংক্রমণের প্রবণতা রোধ করতে ভারতের পুরোপুরি ২ থেকে ৪ সপ্তাহের প্রয়োজন হতে পারে। বৃহস্পতিবার ভারতীয় টেলিভিশন সিএনএন নিউজ ১৮ নিউজ চ্যানেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা জানান। ফাউচি বলেন, ভারতে কমপক্ষে ২ ধরনের ভাইরাসের বৈকল্পিক প্রজাতি ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, করোনার ব্রিটিশ প্রজাতি বি ১১৭ নয়াদিল্লিতে এবং ৬১৭১ প্রজাতিটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ পশ্চিম মহারাষ্ট্রে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। দু›টি প্রজাতিই এক বছর আগের মূল উহান ভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী এবং আরও দক্ষতার সাথে সংক্রমিত করার ক্ষমতা সম্পন্ন। সূত্র : এপি।