সময়ের আগেই সৌদি আরব ভিশন-২০৩০ লক্ষ্য অর্জনের খুব কাছে চলে এসেছে, জানিয়েছেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবে কোনও আয়কর থাকবে না বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) স্থানীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভিশন-২০৩০ পর্যালোচনায় তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যময় পরিবর্তন আনার কথা উল্লেখ করেন ক্রাউন প্রিন্স।
এর আগে সংস্কার কর্মসূচির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে আল মুডাইফার শো’র এক বক্তৃতায় আয়কর দেয়ার যে কোনও পরিকল্পনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেন তিনি। তিনি বলেন, সৌদি আরবে মোটামুটি কোনও আয়কর থাকবে না। যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সর্বাধিক ১৫% ছিল, তা ৫ বছরের জন্য। আগামীতে তা কমিয়ে আনা হবে।
ক্রাউন প্রিন্স বলেন, তেল আবিষ্কার হওয়ার আগে সৌদি আরবে যে অর্থনীতি চলছিল এখনও সেই অর্থনীতি দেশের জন্য অপরিহার্য। তহবিল এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভিশন ২০৩০ চালু করা হয়েছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গির লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারী খাতকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
ক্রাউন প্রিন্স জোর দিয়ে বলেন, আমার এই আগ্রহটি ভিশন-২০৩০ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সৌদি নাগরিকদের সন্তুষ্টি অর্জনে নিহিত। পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (সার্বভৌম তহবিল) একটি বিশাল তহবিল বৃদ্ধি করা হবে এবং তহবিলের লভ্যাংশ আগামী পাঁচ বছরে আরও ২০০ শতাংশের বেশি লক্ষ অর্জন করবে। এই তহবিল রাজ্যের বাজেটে স্থানান্তরিত হবে না বলেও জানান তিনি।
শেয়ার বাজারে কথা উল্লেখ করে ক্রাউন প্রিন্স বলেন, আবাসন নীতি উন্নয়ন, আইন বিকাশ এবং কিংডমের অর্থনীতিতে বেসরকারী খাতের অবদান বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ প্রভাবশালী অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় উল্লেখযোগ্যভাবে সৌদি শেয়ার বাজার অবদান রাখছে।
২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটন খাতে নতুন তিন মিলিয়ন চাকরির সুযোগের মাধ্যমে বর্তমান সৌদি আরবের যে ১৪ শতাংশ বেকারত্ব আছে তা কমিয়ে ১১ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ক্রাউন প্রিন্স।
সৌদি আরবের শিক্ষা ব্যবস্থা কথা উল্লেখ করে ক্রাউন প্রিন্স বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা খারাপ নয়, বিশ্বের ২শ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩টি সৌদি আরবের। যে শিক্ষামূলক কর্মসংস্থান রয়েছে তা আরও উন্মুক্ত হয়ে উঠবে এবং দক্ষতা বিকাশের পরিকল্পনাগুলোতে ফোকাস করবে।
স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে কর্মসূচি আনা হয়েছে তা সেবার স্তরে বড় পরিবর্তন আনবে।
অবকাঠামোগত দিক দিয়ে রিয়াদ শহর একটি উন্নত শহর যা বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ খুব ভালোভাবে পরিকল্পনা করেছেন। শুধু রিয়াদ নয় অন্যান্য শহরগুলোকেও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে উন্নত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ক্রাউন প্রিন্স বলেন, সৌদি আরবে গত চার বছরে ৪০ শতাংশ উদ্ভিদ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা রাজধানীসহ পরিবেশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে এবং যা ট্যুরিস্টদের আকর্ষণ করছে।
তিনি বলেন, আমাদের বৈদেশিক নীতির স্বার্থ সৌদি আরবের স্বার্থ, সৌদি আরব অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কোনও চাপ সহ্য করবে না। সৌদি আরব কোনও কিছুই ভয় পায় না এবং আমাদের অভিধানে ভয় বলে কিছু নেই।
ইরানের সাথে সুসম্পর্ক চায় উল্লেখ করে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ইরানের সাথে সৌদির সমস্যা হলো তাদের আচরণ, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো। আমরা আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং ভালো বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলার।
ইয়েমেনীয় সংঘাতের বিষয়ে ক্রাউন প্রিন্স বলেন, আমরা হুতিদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছি। নিঃসন্দেহে হুতিদের সাথে ইরানের শাসকগোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা তারা অবসান ঘটিয়ে আরবের এবং ইয়েমেনের জনগণের স্বার্থে আমাদের সাথে কাজ করবে এবং দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাবে।