বাংলাদেশের প্রথম অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে পর্তুগালের রাষ্ট্রপতি উমরাও মোকতার সিসোকো এমবালো’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তারিক আহসান।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে) গিনি বিসাউ-এর রাজধানীতে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান গিনি বিসাউ-এর প্রেসিডেন্ট ভবনে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রদূত সালাম গ্রহণকালে বাংলাদেশ ও গিনি বিসাউ-এর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয়পত্র পেশের পর সেদেশের রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মধ্যে একটি সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রদূত তাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।
তিনি বাংলাদেশ এবং গিনি বিসাউ-এর ঐতিহাসিক সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, উভয় দেশই মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং একই সঙ্গে (সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ ) জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করেছে। অতীতে দুই দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক না থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয়পত্র পেশের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বলেও রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে গিনি বিসাউয়ের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করা হলে উভয়দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অধিকতর মজবুত হবে বলে রাষ্ট্রদূত মত প্রকাশ করেন। তিনি দু’দেশের মধ্যকার অপার বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, গিনি বিসাউ বাংলাদেশ থেকে সুলভ মূল্যে উন্নতমানের পণ্য যেমন তৈরি পোশাক, ঔষধ সামগ্রী, সিরামিক, ইলেক্ট্রনিকস, সফটওয়্যার, বাইসাইকেল/মোটরসাইকেল এমনকি জাহাজ আমদানি করতে পারে।
তৃণমূল পর্যায়ে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মত প্রকাশ করেন যে, “সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন”-এর আলোকে বাংলাদেশ এবং গিনি বিসাউ গ্রামীণ উন্নয়ন এবং কৃষিখাতে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে একসাথে কাজ করতে পারে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক ইস্যুতে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোতে দু’দেশের একযোগে কাজ করার উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে সম্মানজনক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ এবং ওআইসির মতো বহুপাক্ষিক সংস্থায় গিনি বিসাউয়ের অব্যাহত সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রদূতের উত্থাপিত বিষয়সমূহকে গুরুত্ব সহকারে শ্রবণ করেন এবং তার দেশে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয়পত্র পেশের জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও শান্তি কামনা করে তাদেরকে শুভেচ্ছা প্রেরণ করেন। সামনের দিনগুলোতে দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরালো হবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতি উভয়দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ প্রসারিতকরণ বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং সক্ষমতা উন্নয়নে একযোগে কাজ করার বিষয়ে আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এক্ষেত্রে দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যমী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে গিনি বিসাউয়ের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করার বিষয়ে সদিচ্ছা পোষণ করেন। তিনি রাষ্ট্রদূতকে তার কর্মকালে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও সমর্থনের আশ্বাস দেন।
পর্তুগিজ ভাষাভাষীর এই দেশটি ১৯৭৪ সালের পর্তুগালের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বিপ্লবের পর পরই পর্তুগালের শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির আর্থসামাজিক উন্নয়নে পর্তুগাল ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে এবং পূর্বের কলোনিয়াল শাসনের কারণে গিনি বিসাউয়ের নাগরিকগণ পর্তুগালে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।