করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সরবরাহে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন।
কমিশনের মূখপাত্র বলেছেন, আমরা গত শুক্রবার থেকে তাদের বিরুদ্ধে এই আইনি ব্যবস্থা শুরু করেছি। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ২০২১ সালের প্রথম কোয়ার্টারে ৯০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন কমিশনে সরবরাহের কথা থাকলেও মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডোজ তারা দিতে পেরেছে। এতে করে দ্বিতীয় কোয়ার্টারের প্রতিশ্রুতির এক লাখ ৮০ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহে সন্দেহ দেখা দেয়।
এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকা দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ৭০ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে। অথচ কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যের সাথে প্রতিশ্রুতি সবকটি ডোজ সরবরাহ করেই চলেছে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। তারা এর জন্য প্রকাশ্য কোম্পানিকে ও যুক্তরাজ্যকে দোষারোপ করে বিবৃতি দিয়েই যাচ্ছেন।
চুক্তির মূল শর্তগুলো কী কী?
কমিশন করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের ৩০০ মিলিয়ন ডোজ কেনার জন্য গত বছরের আগস্টে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে একটি চুক্তি করে। এই ৩০০ মিলিয়ন ডোজ ২০২১ সালে পুরো বছর সরবরাহের কথা ছিলো। আরো অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন ডোজ কেনার বিকল্প রাখা হয়েছিলো।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভাইরাল ভেক্টর প্রযুক্তি ব্যবহার করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অংশীদার হয়ে এই ভ্যাকসিন তৈরি করে। এই কৌশলটি মানবদেহের কোষগুলোতে ভিন্ন ভাইরাস (ভেক্টর) এর একটি সংশোধিত সংস্করণ ব্যবহার করে ইমিউনিটি তৈরি করে। ফাইজার বায়োনটেক ও মডার্নার ভ্যাকসিনের তুলনায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি অতি সাশ্রয়ী ও সহজেই সংরক্ষণ করা যায় বিধায় এটার চাহিদা ছিলো অনেক।
বেলজিয়াম থেকে ফাঁস হওয়া এক তথ্যে জানা যায়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য কমিশন ব্যয় করে এক দশমিক আটাত্তর ইউরো। অন্যদিকে ফাইজার বায়োন্টেকের ভ্যাকসিনের জন্য প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম পড়ে ১২ ইউরো।
ভ্যাকসিন ডেলিভারিতে কী সমস্যা হয়েছিলো?
ইউরোপীয় কমিশন তার জনগণের জন্য গত ডিসেম্বর শেষের দিকে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করে। ২০২১ সালে প্রথম দিকেই পরিস্কার হয়ে যায় যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা তার প্রতিশ্রুতি মতো ভ্যাকসিন সরবরাহের হিমশিম খাচ্ছে। প্রথম কোয়ার্টারে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা ছিলো ৯০ মিলিয়ন ডোজ কিন্তু সেটাকে কর্তন করে মোট মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করেছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে কমিশন। কেন না সদস্য রাষ্ট্র সরকারগুলো ফাইজার ও অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর করে তাদের পরিকল্পনা তৈরি করেছিলো।
ভ্যাকসিন দেয়া শুরুর একমাস পর কমিশন ব্লকের অভ্যন্তরে ভ্যাকসিন উৎপাদনের ওপর জোর দেয় ও ভ্যাকসিন রফতানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। ফলে ইতালি দুই লাখ ৫০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন অস্ট্রেলিয়ায় না পাঠিয়ে আটকে দেয়। আবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনে রক্ত জমাট বাধে এই কারণে ইউরোপের বেশির ভাগ রাষ্ট্র সেটা ব্যবহার স্থগিত করে। ফলে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন উৎপাদনে স্থিরতা দেখা দেয়।