নিয়মিত মাস্ক পরার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে না মানলে একজন করোনা রোগী থেকে এক মাসে ৪০৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
ভারতের চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিএমআরের গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম মহাসচিব লব আগারওয়াল। আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে অযথা ভিড় বাড়ানো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লব আগারওয়াল বলেন, ‘ছয় ফুট দূরত্ব থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকলেও এমন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর মাস্ক না পরলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ৯০ শতাংশ।’
‘একজন সুস্থ মানুষ যদি মাস্ক পরেন, আর আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মাস্ক না পরেন, সে ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায় ৩০ শতাংশ। দু’জনেই মাস্ক পরলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে মাত্র ১.৫ শতাংশ।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতের উন্নয়ন নীতি বিষয়ক ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত সংস্থা নিতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিভাগের সদস্য ভি কে পাল।
তিনি বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ববিধি যদি ৫০ শতাংশও মেনে চলা হয়, করোনা রোগী থেকে মাত্র ১৫ জন সংক্রমিত হতে পারেন। দূরত্ববিধি যদি ৭৫ শতাংশ মেনে চলা হয়, সে ক্ষেত্রে একজন রোগী থেকে মাত্র আড়াই জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।’
‘সবাইকে তাই অনুরোধ করছি, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোবেন না। বাড়িতেও মাস্ক পরুন। এই সময় কাউকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাবেন না। মনে রাখবেন করোনাকে হারানোর একটাই উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মাস্ক এবং পরিচ্ছন্নতা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।’
জনগণকে আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি না করার আহ্বান জানিয়ে লব আগারওয়াল বলেন, ‘আতঙ্কেই অনেকে হাসপাতালে ছুটছেন। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোর উচিত চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া— কাকে ভর্তি করা প্রয়োজন, আর কাকে নয়।’
ভারতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৩০ জানুয়ারি, কেরালা রাজ্যে। তারপর থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর গত বছর নভেম্বর থেকে কমে আসছিল দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
তারপর গত মাসের (মার্চ) দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের বাড়তে শুরু করে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যু। মার্চ মাসে করোনায় ভারতে মারা গিয়েছিলেন ৫ হাজার ৬৫৬ জন করোনা রোগী।
চলতি এপ্রিলে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় গুণেরও বেশি। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এপ্রিলে এখন পর্যন্ত ভারতে মারা গেছেন ৩৪ হাজার ৬০০ রোগী এবং তাদের অর্ধেকেরও বেশি, ১৭ হাজার ৩৩৮ জন মারা গেছেন গত সাত দিনে।
সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। গত সাত দিনে ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২২ লাখ ৪৯ হাজারেরও বেশি, আর এ রোগে এক সপ্তাহে দেশটিতে মারা গেছেন ১৭ হাজার ৩৩৮ জন।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৭৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩০৭ জন এবং মারা গেছেন মোট ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৯৪ জন।
এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জন, মারা গেছেন ২ হাজার ৭৭১ জন।